আমি যে একজন নারী
একথা ভাবতেই ভীষণ কষ্ট লাগে।
এ সমাজে,  যে তার কোন্য মূল্য নেই
তা আমি ঢের হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।
আমি কারো বধু হবো আমাকে যে কেউ  
দেখতে আসছে তা ভাবতেই
গায়ের লোমগুলো কাটাদিয়ে উঠে।
শরীর কেমন যেন হিমশীতল হয়ে আসে।
দেহের রক্তকণিকা গুলো জমাট বেধে যায়।
বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান কমে যায়।
নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।
অজানা এক ভয় বুকের মাঝে ড্রাম পিটায়
হৃদপিন্ডের বিট বেড়ে যায়।
ভিতর থেকে নিজেকে খুব দূবর্ল মনে হয়।
নারীর কূলে জন্ম নিয়ে নিজেকে
খুব ছোট বলে মনে হয়।
সেজে, গুজে, রং মেরে সং সেজে
নিজেকে পুজ্ঞিভূত করে উপস্থাপন করা।
যাতে কিনা বর পক্ষের পছন্দ হয়।
রুপের মোহে মুগ্ধ করা আকৃষ্ট করার সকল রকম
কলার প্রয়োগ ঘটানোই যেন একমাত্র লক্ষ্য।
নিজেকে এমন ভাবে উপস্থাপন করতে হয়।
যাতে কিনা তাদের একমাত্র পছন্দের কারণ বলে বিবেচিত ।
এখানে বর পক্ষের পছন্দ অপছন্দের
বড় একটা ব্যাপার রয়েছে।
তাদের রুপের মোহে আকৃষ্ট করতে পারলে,
পছন্দ হলে বিয়ে হবে নচেৎ নয়।
সে যেন একটা বাজারের পণ্য
একথা ভাবতেই তার ভীষণ কষ্ট লাগে।
পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থার কু-প্রথা থেকে
কবে যে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো!
চোখের দেখা দেখবে তা তো নয়,
তার সাথে চলে নানা রকম ফূসরৎ।
কোন না কোন ছুতো হাতে
যেতে হয় তাদের সামনে,
হতে পারে সেটা নাস্তা দেবার উদ্দ্যেশে।
ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী
ছালাম দিয়ে শুরু হয় পরের লাইন গুলো।
ছালাম দেওয়াটা ঠিক হলো কিনা?
ছালামের উচ্চারণ ঠিক আছে কিনা?
ইত্যাদি বিষয় নিয়ে চলে  পাত্রীর মান নির্ণয় প্রক্রিয়া।
আরম্ভ হয় অহেতুক প্রশ্ন পালা
যার জবাব তারা আগে থেকে জ্ঞাত
যেমন, তোমার নাম কি?
কোন লেভেলে পড়াশুনা করছ।
তোমরা কয় ভাই-বোন, অন্য আর সবাই কে কি করে?
তোমার বাবার নাম কি?
মাঝে মাঝে এমন ছোট কথা বলে
এত আস্তে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়
যা কর্ণ গহবরে পৌছে কি না?
এর দ্বারা যাচাই হয়ে যায় পাত্রীর শ্রবণ শক্তি।
শুরু হয় দেখার পালা মা তোমার মুখটা উঠাও,
ঘোমটাটা একটু ফেল
তোমার চুলটা দেখি,
একটু হাসতো দেখি
কোন অ-পরিচিত লোকের সামনে
এভাবে নিজেকে বেধে ধরে উপস্থাপন করাতে
বুকের ভেতর যে সিডরের  আঘাত হানে
তাকে এরকম হাসতে বলা হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়।
সোজা আমার হাতের দিকে তাকাওতো দেখি,
আমার হাতে এই চাবি রিংটির রঙটা কি তা বলতো দেখি।
তোমার হাতটা দেখি, এবার দাঁড়াও দেখি,
মনে কিছু নিওনা তোমার পা-টা দেখি
একটু হাটোতো দেখি।
হায়রে অবোলা নারী --------।
যে আমরা আজ অবধি এই কু-প্রথার জাল ছিন্ন করে
বেরিয়ে আসতে পারিনি,
সেই আমরায় আজ গলা ফাটিয়ে
সম-অধিকারের কথা বলি ,
অধিকার সংরক্ষনের কথা বলি,
সম্মানের কথা বলি,
নারী নেতৃত্বের কথা বলি,
নারী মর্যাদার কথা বলি।
এর দ্বারা কি
নরীর সম্মান খূন্য হচ্ছেনা?
মর্যাদা হানী হচ্ছেনা?