নাম কি?               কালা মনাই।
কি করিস?            কাগজ টোকাই।
বাপ কই?              জানি না।
মা আছে?             তো আছে না?
নাম কি তার?        কালার মা।
ভালো নাম?          আমার মা।
থাকিস কই?         রাস্তায়।
কাথা বালিশ?       এই বস্তাই।
মা কি করে?          কাম করে?
কই করে?              অনেক দূরে।
দিনে আসে?          না ভাই।
কেন রে?                সময় নাই।
রাতের বেলা?         হুম আসে।
কই থাকে?             আমার পাশে।


    কান্নায় চোখ ভরে আসছে দীপুর। কিন্তু এইটুকু ছেলের সামনে কাঁদবে? কেমন দেখায়? তাই কান্না চেপে ছেলেটাকে আবার জিজ্ঞেস করে দীপু,


খাস কি ভাই?                যখন যা পাই।
আজ কি খেলি?            কিছু খাই নাই।
বেলা কত বাজে?          সবে ১ টা।
খাবি কখন?                  বাজবে ৪ টা।
আমি যদি খাওয়াই?    খাওয়াবেন ভাই?
কি খাবি বল?              যা দিবেন তাই।


  ওর বুক ভার হয়ে এসেছে। কথায় আসছে অদ্ভুত আওয়াজ, যেন একটা রাজহাঁস ডেকে চলেছে ফ্যাস ফ্যাস করে। আর কান্নাগুলি? ফল্গুধারার মতো রয়ে গেছে ওর চোখের পেছনেই। মধ্যবিত্ত, বড় রেস্তোরাঁয় না গিয়ে ছোট একটা বিরিয়ানি হাউজে নিয়ে খাওয়ালো কালা মনাই কে। ওর তৃপ্তি ভরে খাওয়া চাতক পাখির মতো চেয়ে দেখছে দীপু। খাওয়া শেষে কালা বলে,


টাকা আছে ভাই?      কেন আরো খাবি?
না পেট ভরছে।          বাড়িতে নিবি?
মায়ের লাইগা,,           নিয়ে যা ভাই।
কত টাকা দাম?          আমিই দেই ভাই।
না সেইটা না!              তবে কি ভাই?
কাম কইরা দিমু!         দরকার নাই।
আপনে মহান!             ধুর পাগলা!
পা ছুমু ভাই।                যা বাড়ি যা!


  বারণ করা সত্ত্বেও কালা দীপুর পা ছুয়ে নেয়। এবার কালাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কষে নিজের বুকে চেপে রাখে দীপু। কিন্তু ও খুব শক্ত বটে, ফল্গুধারা বয়ে যায় ঠিক ভেতর দিয়েই। কালা চলে যায়। ও ভাবে, যদি এরা প্রতিদিন আমার মতো একজন পেতো, অথবা আমিই যদি প্রতিদিন ওর মতো একজনের খোজ করতাম, তবে দৃশ্যটা কেমন হতো?


এবারে দু ফোটা জল গড়াতে দেয় নিজের গালে। এটুকুর প্রয়োজন ছিল।