কাব্য! এই নামটা তুমিই দিয়েছ, তোমাকেই। মনে আছে?
নামটা ধরে যখন তোমাকে ডাকি,
তখন মনে হয় যেন প্রজাপতির ডানায় ভর করে ভেসে বেড়াচ্ছি।


এখন যেমন এই পৃথিবীর কঠিন সময়, ঠিক তেমনি
একটা কঠিন সময় ভারী পাথরের মতো তোমার বুকের উপর চেপে আছে।
আমি বুঝতে পারি, কাব্য। একই রকমের একটা পাথর যে আমার বুকেও আছে!


কতদিন হয়ে গেল, তুমি নির্বিঘ্নে ঘুমাওনি।
আমার ইচ্ছে করে, তোমাকে কাছে টেনে পায়ের উপরে নিই।
তুমি সেখানে মাথা রেখে আমার কোমর জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকবে।
আমি হাত রাখব তোমার মাথায়, চুলে বিলি কেটে দেবো।
আমার হাত খেলতে থাকবে তোমার মাথার এ-প্রান্ত ও-প্রান্ত।


তুমি ঘুমিয়ে গেলে, শুইয়ে দেবো ছোট্ট শিশুর মতো করে,
খুব আলতো ছোঁয়ায়, যেন ঘুম না ভাঙে।
তুমি একটুখানি নড়ে উঠবে, আমি তোমার পাশেই রইব। দেখব। হাতটা রাখব হাতের মুঠোয়।
দেখব, অনেক দিন পর একটা শান্তির ঘুম তোমার সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে স্বপ্নের সাথে লুকোচুরি খেলছে।


তোমার সাথে যা যা হয়েছে, তা আমি বুঝি, কাব্য!
নিজের আপনমানুষও রঙ বদলে ফেলে!
আমরা যাদেরকে একসময় ভালোবাসার রঙে চিনতে পারতাম,
তখন তাদের চোখেমুখেও কী একটা সন্ত্রস্ত ভাব,
যেন সব কিছুর জন্য আমিই দায়ী।


এসব হয়, কাব্য! জীবন থাকলে জীবনের এমন কিছু দায় থাকেই।
কিংবা বলতে পারো, এসব কিছু জীবনে হয় বলেই
জীবনের এপিঠ ওপিঠ আমরা দেখে ফেলি।


আমারও যে কত কষ্ট ছিল, কাব্য…তুমি ভাবতেও পারবে না!
সময়ের সাথে সাথে সেই কষ্টকে আমি শক্তিতে রূপান্তর করেছি।
যাকে ভালোবাসি না, তার সাথেও দিব্যি জীবন কাটিয়ে দিয়েছি।


কাব্য, আমার কখনও কখনও মনে হয়েছে, আমি খুনি।
আমি খুন করে গিয়েও অফিস করেছি শান্ত হয়ে,
পৃথিবীর কোথাও কেউ টের পায়নি,
আমি কতটা যুদ্ধ করে করে সময় কাটিয়েছি৷ বুঝতেও দিইনি।


তখন নিজের পাশে এক আমিই থেকেছি দিনের পর দিন!
অনেক রঙ দেখেছি পরিবারের! আমি শ্রদ্ধা হারাইনি,
তবে কোথায় যেন একধরনের কষ্টের সূক্ষ্ম বোধ
আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে চেয়েছে।


তোমার এমন হয়, বলো কাব্য? তুমি তো লিখো।
লিখতে পারলে তোমার মনে হয়, তুমি আমাকে কাছে পাচ্ছ,
আমাকে জড়িয়ে ধরে প্রশান্ত হচ্ছ। এটা হয়, আমি জানি।


এ সমাজকে তুমিও চেনো, আমিও চিনি।
তাই এ নিয়ে আর কথা না বলি।
জানো কাব্য, আমি আবার ফিরে এসেছি আমার সন্তানের দিকে তাকিয়ে।
তা না হলে সে যে তার সত্যিকারের মাকে হারিয়ে ফেলত!
সবাই বোধহয় এজন্যই ফিরে আসে! এই পিছুটানটা কী এক বাধ্যতায় বেঁধে রাখে!


এখন আমার কষ্টের রঙবদল হয়েছে।
আমি হাসি আমার মতো করে, আমার গতিতেই আমি চলি।
তোমার কষ্টগুলো কী, আমি ঠিক জানি না।
তবে তোমার কষ্টের কিছুটা ধারণ করার বন্ধু হয়ে
তোমাকে তো আমি অনেক কথাই বলতে পারি। পারি না, কাব্য?


তোমার ঠোঁটে লিপজেল লাগানোর মতো করে একটা চুমু একেঁ দিতে পারি।
একটা দিই, কেমন? তোমাকে কিন্তু ভালো থাকতেই হবে! হবে না, বলো?
আমি যে সেই তুমিকে খুঁজে বেড়াই…
তুমি তো দিক হারিয়েই ফেলেছ! ফিরে এসো, কাব্য!


আচ্ছা, তুমি শুধু ওই মেয়েটাকেই ভালোবাসো, তাই না?
ও কোথায় আছে? ভালো আছে তো? বরটা ওকে আদর করে?
আমার কিন্তু ওকে খুব হিংসে হয়। একটা ব্যাপার কী, জানো…
শুধু ওকে ভালোবাসার চেয়েও আরও কিছু কাজ যে বাকি আছে।
সেগুলোও তো করতে হবে, কাব্য! তুমি বোঝ না?


সব ঠিক করে ফেলো তো!
নিজের মুখে একটু হাত বোলাও তো!
চোয়ালটা একটু নিচের দিকে টানো তো!
এসো, ঝগড়া করি, মারামারি হোক! ঢিসুম ঢাসুম!
তুমি কিন্তু আমার সাথে একদমই পেরে উঠবে না, বলে দিচ্ছি! পারবে, কাব্য?


আচ্ছা, তুমি পারলে পেরো! আমি চুপটি করে হার মানব…
কানে কানে বোলো কিন্তু…সেই কথাটা…খুব চুপিচুপি…
ভালোবাসি! বলবে তো? তুমি অত কিপটে কেন গো, মশাই?