একটা ভিষন ঝাপটা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো,
রাত তখন দ্বি প্রহর হবে.............
ঘুট ঘুটে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিলোনা
ঘড়িটা হাতিয়ে খোঁজার বৃথা চেষ্টা করলাম কিছুক্ষন-
না পেলামনা ঘড়িটা..একটু একটু ভয় ও হচ্ছিলো...
হৃদয়ের স্পন্দন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে তখন ।
তবুও শেষ শক্তি টুকু দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলাম-
ইলেকট্রিক লাইট টা জ্বালানোর উদ্দেশে
এগুচ্ছিলাম খুব সাবধানে...কি যেনো একটা
পায়ের সাথে লেগে পরে গেল..বুঝতে পারলাম
কি ছিলো সেটা,আমার স্বাধের ফুলদানি ছিলো,
ভেঙ্গে গেছে বেশ বুঝতে পারলাম ।
আমি ধিরে ধিরে এগিয়ে এসে দড়জার পাশে দারালাম,
হাত বাড়ালাম অনুমান করে লাইট এর সুইস এর উদ্দেশে..
শূণ্য দেয়ালে হাত পরেছে,একটু এদিক সেদিক হাত বুলাতেই
পেয়ে গেলাম সুইস বোর্ড,সুইস চেপে লাইট জ্বেলে দেখি..
আমার ফুলদানি টি ভেঙ্গে ছড়িয়ে পরে আছে...
বুকের মধ্যে একটা অজানা যাতনা শুরু হলো,
এই ফুলদানিতে যে, কতোবার মানষীর দেয়া ফুল-
শোভা পেয়েছে তার কোনও ইয়াত্তা নেই ।
তোমাকে হাড়িয়ে যে ফুলদানিকে দির্ঘ
১৩ টা বছর আগলে রাখলাম তা এক নিমিষেই
আমার স্বপ্ন ভাঙ্গার মতো খান খান হয়ে গেলো ।
নিজেকে সামলে নিয়ে খোঁজার চেষ্টা করলাম
সেই ঝাপঁটা শব্দটার কেন্দ্রস্থল.......
না, কিছুইতো নেই...জানালাটা খোলা...
হালকা ফুরফুরে বাতাস আসছিলো তখনো...
বুঝতে অসুবিধে হলোনা শব্দটা প্রচন্ড বাতাসের সাথে
জানালার খোলা পাল্লার পরাজয় ছিলো ।
আমি ধিরে ধিরে এসে দড়ালাম জানালার গ্রিল ধরে,
আকাশের পানে চেয়ে দেখলাম কি সুন্দর পূর্ণিমা চাঁদ উঠেছে..
অকৃপন ভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছে নীল জোছনা......
অবাক চোখে দেখছিলাম প্রকৃতির এই অপরুপ খেলা ,
এক সময় চোখ গিয়ে আটঁকে গেলো বাগানের শেষ-
সিমানার কৃষ্ণচূরা গাছের ছাঁয়া তলে বেড়ে উঠা
হাসনাহেনা গাছটির দিকে....অবাক হলাম....!
কে ওখানে...দাড়িয়ে আছে ? সাদা শাড়ি পরে..
পরম আদরে বুলিয়ে দিচ্ছে হাত সদ্য ফোঁটা ফুলে ?
যে ভাবে হাত বুলাতো মানষী ঠিক সেভাবে...
বুকের গভিরে যখন না না প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছিলো তখন
ঘুরে দাড়ালো সেই সাদা কাপড় পরা মানুষটি.....
আমি কিছুক্ষনের জন্য অষাঢ় হয়ে গেলাম...
সেকি এযে দেখি আমার মানষী দাড়িয়ে আছে-
তবেকি এতোগুলো বছর পরে মানষী ফিরে এলো ?
যে মানষী পিতা মাতার কথা রাখতে গিয়ে-
আমার ভালোবাসা উপেক্ষা করে আপন করে নিয়েছিলো
অজানা-অচেনা একজন মানুষের সংসার ...!
সে মানষী কি তবে ফিরে এলো সত্যিই এই অরণ্যের কাছে ?


আমি তখন অনুভব করলাম কে যেন আমাকে
পেছন থেকে হাত ধরে টানছে,চোখ ফেরাতেই দেখলাম মা ,
মা দাড়িয়ে আছেন আমার শিয়রে,আমাকে জাগাতে এসেছেন..
আর আমি শুয়ে আছি বিছানায়,প্রথমে মেলাতে পারছিলামনা
আসলে কোনটা স্বপ্ন আর কোনটা বাস্তব ।
মা চলে গেছেন ততক্ষনে ,আর আমি জানালা দিয়ে
বাহিরের দিকে তাকালাম বিছানায় শুয়ে ই-
সকালের সোনা রোঁদ ঝিলিক দিচ্ছে কাঁঠাল চাঁপার কঁচি পাতায়
আমার এতোক্ষনে মনে পরলো ফুলদানি টির কথা...
চোখ ফিরিয়ে দেখলাম - না অক্ষত ই আছে সেটা...
এক গুচ্ছ শুক্ন গোলাপ  তার বক্ষে শোভা পাচ্ছিলো তখনো ।



নির্জন আহমেদ অরণ্য