আমি যুদ্ধ দেখিনি , আমি দেখিনি সারিবদ্ধ লাশের কাতার
আমার জন্ম হয়েছিল স্বাধীন দেশে ,  
মায়ের কাছে শুনেছি যুদ্ধের জয়গান  
মায়ের মুখে নাক রেখে শুঁকে দেখতে চেয়েছি
সেদিন বাতাসে বারুদের গন্ধ কতটা ছিল
কান পেতে শুনতে চেয়েছি কতবার
সজনের লাশ বুকে কতটা আর্তনাদে ভারী হয়েছিল আকাশ ?
আমি যুদ্ধ দেখিনি , দেখিনি শহীদের বুক থেকে
ক্লেদের মতো গড়িয়ে পরা শুঁকনো রক্তের চাপ চাপ দাগ ...
দেখিনি কি করে একটি বুলেট ছুটে এসে
নববধূর স্বপ্ন করেছিল ধূলিসাৎ
মেহেদির রঙ না যেতেই অঙ্গে জড়াতে হয়েছিল সাদা শাড়ি ,
আমি দেখিনি সেদিন ভাই হারা বোনের গালে আঁকা
চোখের জলে স্নান করা অঞ্জলির দাগ ...।
আমি শুনেছি কেবল মায়ের কাঁপা কণ্ঠে সেদিন গুলোর কাহন
অবুঝ শিশুর পাশে পরে থাকা পিতামহের ক্ষত বিক্ষত লাশ ,
মানুষরূপী হায়েনার থাবায় নারীর ক্ষত বিক্ষত বুক
অমানুষিক বর্বরতার যন্ত্রণার চিৎকারে সেদিন নাকি
আড়াল হয়ে গিয়েছিল শিশুটির ক্রন্দন  !
মানুষ হয়ে জন্ম নেয়ার অপরাধে হয়ত সেদিন
অবুঝ শিশুটির বুকেও জন্মেছিল পৃথিবীর প্রতি  ঘৃণা ,
সেদিন বিবেকের কাছে মনুষ্যত্বের মৃত্যু হয়েছিল
ধিক্কার তাদের মানুষ হয়ে মশাদের মতো মানুষের রক্ত নিয়ে
খেলেছিল সেদিন যারা এই নোংরা খেলা ...।
আজ ঘুমিয়ে আছে মায়ের মমতা ভরা কোলে তারা
সেদিন একটি স্বাধীন দেশের জন্যে প্রাণ দিয়েছিল যারা ,
কিছুই হয়নি ভুলা , কখনও ভুলার নয় এ ঋণ  
আজও বাঙালীর রক্তের স্রোতে বাজে সেই বীণ ।


স্বাধীনতা মানে এই নয় জন্মগত সূত্রে একটি পাওয়া
স্বাধীনতা মানে নয় যা ইচ্ছে তাই করা ,
সেই স্বাধীনতা চাই যে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিল সেদিন
চল্লিশ বছর আগে বাঙালীর তাজা রক্তে স্বাক্ষর করা ।


নির্জন আহমেদ অরণ্য


উৎসর্গ - মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া প্রতিটি বীর সূর্য সন্তানকে.....।।


প্রতিটি বীর যোদ্ধার প্রতি অন্তরের গভীর থেকে শ্রদ্ধা , বিরঙ্গনাদের প্রতি পর্বত-সম সম্মান , শহীদ জননী দের কে জানাই কৃতজ্ঞতা, আমাদের আজন্ম ঋণ  প্রতিটি শহীদ পরিবারের কাছে । এ ঋণ
কখনই শোধ হবার নয় ।


আমাদের লজ্জা - এ জাতীর লজ্জা চল্লিশ বছর পরেও বীর যোদ্ধাদের যখন দেখি জীবন যুদ্ধে এখনও তারা যুদ্ধ করে যাচ্ছেন । চল্লিশ বছর পরেও একজন বীর যোদ্ধা  জিন্নাত আলীকে খুন হতে হয় তারই জীবন বাজী রেখে অর্জিত স্বাধীন দেশে । আমরা তাদের প্রাপ্য সম্মান এবং জীবনের নিরাপত্তা দিতে অপারগ অথচ তারাই আমাদের উপহার দিয়েছিলেন একটি মানচিত্র একটি স্বাধীন দেশ একটি পতাকা । এ লজ্জা আমাদের যখন একজন মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী স্বাধীনতার ৩০ বছর পরেও স্বাধীনতাকে খুঁজে ফিরেন ।