বন্ধ চোখ খুলি, সামনে প্রসারিত জলরাশি,
সমুদ্র এসে নোনাজলে ভিজিয়ে দেয় চোখ,
বুকের বেলাভূমি এক নিমেষে ভিজে যায়,
মছে যায় ফেলে আসা জীবনের সব আঁকিবুকি,
পড়ে থাকে সফেদ মসৃণ বালিয়াড়ী, সখেদ জীবন।


সম্মূখে দাঁড়িয়ে তুমি, জানো না কিভাবে এসে
জনারণ্যকে একপাশে ঠেলে, দাঁড়াও নৈঃশব্দ হয়ে।
হঠাৎ করেই ঝাউবনে শনৈ শনৈ ওঠে,
উড়ো হাওয়ায় ওড়ে তোমার স্কার্ফের প্রান্ত।
পায়ে পায়ে এগিয়ে আস কাছে
আর আমি পাই উন্মনা কর্পূরের গন্ধ।
বিমোহিত হাওয়া,
কাচভাঙ্গা হাসির রিনিঝিনি কিনকিনে শব্দ
নৈঃশব্দকে চুরমার করে।
তারপর চারপাশ গাঢ় কুয়াশাময়।


কে তুমি, কেন এসেছো, কেনই বা ঘিরে ধরেছ চারপাশ!
তোমার মৌতাতে কী যেন কী হয়,
অনুবাদহীন এক চাপ ব্যাথা বুকের এ পাশ থেকে ওপাশে
বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গের মতো আসা-যাওয়া করে,
ভাষাহীন করে তোলে এই আমাকে।


জীবন একমূখী যাত্রাপথ, ফিরে আসে না আর,
ফেলে আসা পদরেখা ধরে, ফেলে আসা পদচিহ্ন বেয়ে
ফিরে যাওয়া যায়না সূচনা বিন্দুতে।
তবু মন বার বার পিছনে যেতে চায়, স্তম্ভিত মন
কেন জানি ঈশ্বরের কাছে বলতে চায়
ফিরিয়ে নাও প্রবাহিত সময়, ফিরিয়ে নাও
কত শত বছরের আগের সময়ে
আমি অারেকবার ফিরে যেতে চা্ই
ফিরে পেতে চাই বিগত আমাকে,
আবার জানি, ফিরতেও চাইনা। আসলে চাই .....
কী যে চাই, আদৌ তা-ও জানি না ।


আসলে বিভ্রমে আছি, আছি বাকহীন বিমুগ্ধতায়।
না, এটা প্রেম নয়, ভালবাসা নয়, নয় মোহ-কামনা।


এ্ই যে সামনে দাঁড়ানো তুমি,
এই যে তোমার পবিত্রতম নির্মল উপস্থিতি
এই যে তোমার কথার স্বচ্ছতোয়া কলকল জলধারা
আমাকে শুধুই নিয়ত খুন করে যাচ্ছে, রক্তে
ভেসে যাচ্ছে নীল জলরাশি, লালে নীলে মিলে কী রং হয়-তুমি জানো?
কিন্তু তোমার নিবিড় কুয়াশায় ছাপিয়ে যায় সে রং।
অনুভব করি রং এর মিশেল, শীতল প্রবাহ
ভেজা বুকে স্পর্শ পাই এক অথবা সহস্র উষ্ন রক্তস্রোত।


এইতো কত কাছে তুমি, ইচ্ছে হলেই তোমাকে ছোঁয়া যায়,
ডাকা যায়। ইচ্ছে হয় না। অথচ যদি তুমি আসতে—
আরো একবার খুন হয়ে যেতে আপত্তি থাকতো না।


এই যে তুমি হাসছো, আমি আরো একবার বধির হচ্ছি,
শত সহস্র শব্দবাণ বিদ্ধ করছে কর্ণকূহর, তবু
তোমার হাসির শব্দ বার বার অভিঘাত করুক, মনের কোণে
এই ইচ্ছেটাই ডালপালা মেলছে, দ্রুত বর্ধনশীল পত্র-পল্লব যেন।


এই যে তোমার ঝুঁকে আসা, প্রগলভতা-ডুবিয়ে চিচ্ছে আমার চরাচর।
জানি সবই অপার্থিব কল্পনা, জানি এসব কখনোই হবে না।


ভুল সময়ে ভুল অবস্থানে দু’জন
দু’মুখী আকর্ষণ দু’জনের দু’দিকে, দু’জনেরই জানা।
তাই আমাদের এই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা, ঘিরে থাকা কুয়াশা
কোন অর্থবহতা সৃজন করে না।


এ শুধু দু’টি সময়ের দু’টি ভিন্নমূখী প্রবাহের
একটিকে অন্যটির অতিক্রম করে যাওয়া অথবা
গা ছুঁয়ে বিপরীত পথে চলে যাওয়া আর কিছু আবহ রেখে যাওয়া।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//চট্টগ্রাম।