৭.
সেই যে এসেছিল চোর, টেনেছিল বসন আমার
ধীরে ধীরে শরীর থেকে নেমেছিল লজ্জার ভার।
তারপর বয়ে গেছে বিলের ঘোলা পানি কত,  
ভেসে গেছে শৈবাল কচুরীপানা, বানের পানিতে ভাসা
অফুরান হল্লা-হাসির দিন হয়েছ কুয়াশাময়,
সে কি বিকেল-সন্ধ্যা-রাত নাকি অন্য কোন সময়
চোখ মেলেও স্পষ্ট কিছু টের পাওয়া যায় না,
চার দেয়ালের ভিতরে ঘুরপাক খাওয়া পান্ডুর আলো ছাড়া।
তারপর একদিন ভোর হয়ে আসে, ভোর কী!
দেখি, আমি আছি, অবিন্যস্ত শয্যা আছে
পৃথিবীময়, এলামেলো পর্দা আছে, জানালার কাছে;
আছে হাওয়া, পরম পাওয়া, ধীরে ধীরে ওড়ায় সে পর্দাকে,
নরোম ছোঁয়ার পলকায়, ইচ্ছেমতো ওড়ার আবেশে;
তবুও হাওয়ায় শরীরে
          বসনে লজ্জা খেলা করে, সরে যেতে চায়
          যদিও অসাড় জড়তা হাওয়ার চলন
          নির্ভার লাগে সারা দেহ মন, অনভ্যস্ততায়
          বোবা হয়ে থাকি কতকাল—জানি না।


তবুও সম্বিত ফিরে, ফিরতেই হয়, সাথে সাথে পেটের ক্ষুধা
সময় দাঁড়িয়ে থাকে দরজায়, ডাক দেয় ইশারায়
নতুন জীবন ডাকছে নতুন অবগাহে, নতুন আঙ্গিনায়
তার সাথে ধবল জমীন, সফেদ পোষাক, ফরাসী কারুকাজ,
মিহিন সুতার, ভ’রে তোলে চারপাশ রুপালী হাওয়া
ঢেকে রাখা মুখ, চোখ, মাথা, ঢাকা সব রকমারি সাজে
গেঁয়ো হাওয়া সুর শেখায়, সব রাগ, আলাপন, বিস্তার
তানপুরা টুন টান, সেতারের তান তার ভাঁজে
হাওয়ার নাচন লাগে, মুখোমুখি সময়ের ভাপে।
এক-পা দুই-পা এলামেলো থেকে হয় ছন্দময়,
দেখি এই আপন আলোয়, নিজেকে, পুড়ে যাই মনস্তাপে।


নতুন মাটিতে বোনা হবে নতুনের বীজ
ফসল উঠবে ঘরে, নিদাঘ, কৃষকের দ্বি-প্রহরে
সময় আসে যায়, আমি থাকি গহীন অন্ধকারে,
ভিতরে গোপন আলো, ভালোবেসে ঢেকে রাখি বুকে
পুড়ে যায় হৃদপিন্ড, পাঁজর, মুখ, প্রেমাগ্নির স্ফুলিঙ্গে
আমাকে বদলাবে যে সে থাকে ছায়ার মতো সারা অঙ্গে সেঁটে
জানি না, সে স্বপ্ন বা কল্পনা, নাকি অপরিবর্তনীয় বিধিলিপি!


তার নাম জানি না আমি, তার কথা বুঝিনি কখনো,
কী যে বলে কী যে করতে চায়! কী ছেড়ে কী ধরতে যায়
সারাক্ষণ সুরে বাঁধা ঘর, বড় বড় ছায়াতরু ঘেরা থাকে
তার ঘর-বাইরে অজস্র পাহারা, কে যেন দৃষ্টি শ্যেন ছড়িয়ে রাখে
ভিতরে শ্মশানের নীরবতা-কেন! বার বার কেন যেন বাজে।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//১৯ জুলাই ২০১৫; রবিবার; ০৪ শ্রাবণ ১৪২২//ঢাকার জীবন