৮.
আমার শৈশব ঋজু, আমার কৈশোর ঋজু, কীটদুষ্ট হয় তন্বী মন,
ঋক্ষ রাগে ছোটে অস্ফুট কোরক মন্থন,
যুবা দেহ অনুক্ষণ, প্রস্ফুটিত ব্যাপক বিন্যাসে-
সব কিছু তার তারে বাজে-কখনো ভৈরবী সুরে,
কখনো ইমন কল্যাণ, কখনো ভূপালী বা ভৈরোঁ ঠাটে।
কী রাত ভোর, কী দুপুর, কী বিকেল, কী সন্ধ্যা রাতে!


গেঁয়ো আমি কী বুঝি সুর, বেহাগ, মল্লার, মালকোশ
তবু দেখি মাঝে মাঝে মন, ভেসে যায় অচেনা সহযোগে
ডুবে যায় অথৈ সাগরে, অচেনা অদেখা ঢেউ।
নদী নয়, তীর নেই, জল ছুঁয়ে নুয়ে থাকা বৃক্ষ শাখা নেই,
নেই কোন জল কাঁপা ছায়া, তবু তার ভিতরেই
চোখ বুঁজে দেখি-সময়ের বাইরের সময়, পরিচিত হারানো কায়া
তুমি নেই, আমি নেই, তবু যেন অলোক বিকেল।


সে আসে, শাবলে হাতুড়ীতে, আঙুলের নিপূণ খেলায়
কাদামাটি দেহ আমার, পোড় খাওয়া মাটির পুতুল
অথবা কঠিন পাথর কেটে তুলে আনা সফেদ সোনা
কেটে কেটে নিপূণ হাতে গড়ে তোলা প্রকৃতির উপমা।


মৃত্তিকা খনন করে, গৌড় থেকে রাঢ়, কর্ষণ করে,
ছেনে ছেঁটে, আদরে ও স্বেদে, ক্রোধ ও ক্লান্তি ঝেড়ে
কেটে কেটে গড়ে তোলে ফের, সুনিপূণ কারিগরের মতো।
ঠোঁটের অইটুকু উপত্যকা অথবা বুকের গহীন গিরিপথে
পাগলের মতো ভঞ্জনা, হিমবাহ দেখি, পাহাড় গলিত করে
নেমে আসে, বয়ে চলে স্রোত-গিরিখাত, ভাসিয়ে উপত্যকা
নক্ষত্রের নাভিমূল পেরিয়ে যেতেই প্রবল প্রকাশ, অকস্মাৎ প্রপাত।


নতুন আঙ্গিকে সাজে দেহ, পরিসীমায় বাড়ে দেহাতী কোমরের বেড়,
ভূমি স্তর বা কটি দেশ, নিতম্বের নন্দন বা চারুতার বন্দনা।
আমার মুদ্রিত চোখে ছুটে চলে অনন্তের ধুমকেতু
ভেসে ওঠে দূর নীহারিকা-নতুন মিল্কীওয়ে, অথবা নতুন কৃষ্ন গহ্বর,
তবু বেঁচে থাকি, বুকের ভিতরে থাকে অলৌকিক স্বপ্ন ঋতু।
মনের ভিতরে চাষ করে চলি অতিলৌকিক ভোর।।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//২০ জুলাই ২০১৫; সোমবার; ০৫ শ্রাবণ ১৪২২//ঢাকার জীবন