কেন এত কাঁদি, পিতা এত কাঁদি কেন
কেন এত কান্না আসে বুক ভেঙ্গে, মন ভাসিয়ে
চোখ ফেটে বেরিয়ে আসে আগুনের হলকার মত
শিশিরের নৈঃশব্দের মতো
বিশুদ্ধতম রক্তের ফিনকি দিয়ে ছোটা ধারার মতো
এতো অশ্রু-এতো ক্ষরণ
এতো বেদনাক্লিষ্ট মৃত্যুর মতো
জোছনার নীলাভ স্নিগ্ধতার মতো
কালো কুটিল কদর্য রাতের
স্টেনগানের বেসুরো বীভৎস শব্দময়তা ছাপিয়ে
শান্ত সমাধীর পবিত্রতার মতো-
ভালবাসা, আহা ভালবাসা
শ্রদ্ধা, আহা বিনম্র নিবেদন এই রাতে, এই শ্রাবণের রাতে
চোখে, বুকে, অস্তিত্বময়;
এতো এতো কাল পরও, অবিনাশী চেতনা-বরাভয়।


এতো কান্না, এতো অশ্রু, এতো অগ্নি স্ফুলিঙ্গ, এতো লাভা স্রোত পেরিয়ে
তুমি ঠিক উঠবে ভেসে আবার পম্পেই থেকে শিশু ও মাতা
তুমি ঠিক বেজে উঠবেই হৃদয়ের কত শত তন্ত্রীর ঝংকারে
তুমি ঠিক নেবেই স্থান করে আবার বুকের প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে
তুমি ঠিক হেসে উঠবেই মাটিতে যত মাতৃজঠরেই বিদ্ধ করো বুলেটে
তুমি আসবেই জানি চেতনার লাল-সবুজ ঝান্ডা ঠোঁটে করে শান্তির শ্বেত পায়রা
তুমি ফিরবেই বুকে জমিয়ে যত নতুন মাটির সোঁদা গন্ধ ভরে ফসল উঠবে ঘরে
তুমি আনবেই নতুন করে এই বাংলাকে মধুমতি বা নারদ কিংবা সারির
ছোট ডিঙ্গি হয়ে-ধীরে ধীরে সহস্র পালতোলা নাও হয়ে;
শুধু আবার শাণাতে হবে আমার পুরাতন কাস্তে-হাসুয়া
শুধু পোড়াতে হবে আবার আমার পলিমাটির একমুঠো কাদা
শুধু জাগাতে হবে ঘুমিয়ে থাকা শিশুটিকে সঠিক শব্দবাণে।


আজ এই মহতী শোকের মাতম পেরিয়ে জানি আলোর সকাল আসবেই
যতই আসুক আঁধার, কালো মেঘ, মহাজাগতিক ঝড়, দাবানল দগ্ধতা
আবার জাগবে অবিনাশী বাঙ্গালী,
ধর্মান্ধতা, কূপমন্ডুকতা,
দেড় হাজার বছরের পশ্চাৎপদতা
মনের ভিতর জমিয়ে তোলা সৃষ্টিলগ্নের জড়তা
দু’পায়ে মাড়িয়ে, সীমানা ছাড়িয়ে, হিরন্ময় প্রত্যুষ হাতে
কোরক খোলা পুষ্পের মত আবার সৌরভ ছড়াবেই,
পিতা তোমাকে স্বরূপে ফিরতেই হবে বাংলার অালো হাওয়া মাটি জলে।


বাংলার মানুষ, জেনে রাখো; শুনে রাখো, লিখে রাখো, চোখ মেলে দেখো।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//অবিনাশী সময়
১৫ আগষ্ট ২০১৫; শনিবার; ৩১ শ্রাবণ ১৪২২; ঢাকা।