সাগর শয়ান শেষে


মা, সমুদ্রের পানি এত মিষ্টি লাগে কেন?
ঢেউ এ্যাত কোমল-মখমলের মতো কেন?
এইটুকু ঢেউ এতখানি নাও উল্টায় কী ভাবে?
ঘর-দোর ফেলে আমরা এই নায়ে অফুরান
সবুজ জলের উপর ভর করে বসে আছি কেন?
এই যে নিভে আসছে আলো আমার শহরে, তাকে ফেলে
পিতা, কোথায় চলছ তুমি, কেন, কোন পথে?
ঘরে গেলে কি হয় তোমার? কে করে অস্ত্র তাক
তোমার বুকে, কেন? বুঝতে পারি না আমি কেন?


খুব ভয় আমার অন্ধকার সাগরে, যদিও তুমি
ধরে আছো আমাকে বাহুতে এইটুকু গলুই এর ভিতরে
অথচ কী সুন্দর আমার ঘর, খেলার সাথী-
ফেলে তুমি কোথায় নিচ্ছ আমায় –
ভাল লাগে না, চল ফিরে চল, আমার ঘরে
এই অচেনা বন্দর, অচেনা শহর, মানুষ অচেনা
আমার বড় ভয় করে, অনেক শীত।
মা, আমাকে জড়িয়ে ধরো বুকে, অনেক বাতাস
নাওটা দুলছে কেন, কাঁপছে কেন, কী পড়ছ তোমরা
বিড় বিড় করে অনবরত, এ কোন সঙ্গীত, নাকি দোয়া!


পিতা, এভাবে বাঁকা হয়ে যাচ্ছে কেন নৌকা, আমাকে ধরো
অনেক শীত বাইরে, পানি, ভিজে যাচ্ছে গা…মা
আমাকে ধরো…মা, তুমি কোথায়……,
এত অন্ধকার, কিছু দেখিনা.…মা….বাবা...এত শীত,
নিঃশ্বাস নিতে পারছি না….বাবা, হাত ধরো…হাত কোথায়…মা…
তারপর নৌকাটি উল্টে যায় পৃথিবী মধ্য সাগরে
হাত থেকে ছুটে যায় আইলান….অনন্ত সলিলে….সাগর নারাজ
ফিরে আসে আইলান….গন্তব্যের খুব কাছে, তুরস্কের তীরে;
সিরিয়া থেকে এতটা পথ পাড়ি দিয়েছে, আইলান, একা
সেই লাল টি শার্ট, কালো হাফ প্যান্ট, সেই অবিনাশী জুতা
খুলে পড়েনি পা থেকে, প্রভুভক্তের মতো, শেষ পর্যন্ত
বাঁধা ছিল পায়ে, ‘‘জুতা’’ আজ পৃথিবীর চোখে।
সে দেখেছে পৃথিবীর রূপ-ভালবাসা-আশ্রয়-আহলাদ-প্রশ্রয়
দেখেছে মানুষের প্রকৃত রূপ-পিতা-মাতা-কত কী!
গন্তব্যে পৌঁছেছে সে, তারপর ভাসতে ভাসতে অথৈ সাগরে
একটুকু এটাই সত্য, আর সব ফাঁকী। সব মিথ্যে।


মানুষের এই অমানবিক সময়ে একজনই ছিল
সঠিক পথের যাত্রী, যে তার গন্তব্যে পৌঁছে গেছে।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//অবিনাশী সময়
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫//সোমবার//২৩ ভাদ্র ১৪২২//ঢাকা।