কখনো কখনো কোন কোন কবিতা হয়ে ওঠে
দারুণ আশা জাগানিয়া; এ যেন ইস্তেহারের ইস্তেহার।
এমন একটা সময় ছিল, মানুষ দিন বদলের স্বপ্ন দেখতো,
লাল মলাটের ভিতরে খুঁজত দুর্বলের আশ্রয়-সহায়,
সংস্কৃতিমনা খুঁজত শিল্পের ঠাস বুনন-নিশানা,
দরিদ্র খুঁজত পেটপুরে খাবার টোকেন-রসনা,
বিত্তশালী খুঁজত-লাল দালানে ভরাবার জন্য
কোন গোপন সূত্র আছে কিনা!এখন এসব হয় না।


এখন অন্যের বানানো জুতোয় পা, জুতোর মাপে পা
অন্যের শ্লোগানে কন্ঠ মেলানো, ভুল বানানে চিঠি লেখা
ভুল শব্দে-ভুল অক্ষরে স্বপ্নের হাইরাইজ নির্মাণ
শহরময় মসজিদ আর ফাইলময় স্পীড মানি
এখন স্বপ্ন ফেরি করে দুঃস্বপ্নের কারিগর।


এখন শহরের নিয়ন আলো হঠাৎ নিভে যায়,
তারপর ঠ-ঠা, আলো জ্বলে ওঠে আবার,
একগুচ্ছ অন্ধকার হাতে করে উঠে দাঁড়ায়
কালো নেকাবে ঢাকা মুখ, দ্রত অপসৃয়মান।


আবার শহর থেকে দূর প্রত্যন্ত গাঁয়ে ধানক্ষেতের
সবুজের পাশেও হঠাৎ ঠা-ঠা শব্দে পাখিরা ত্রস্ত ওড়ে,
গেরুয়া মাটি হয়ে ওঠে লাল।এখন সবুজ মাঠ ছেড়ে
মানুষ ছুটে চলে মরুর পথে, সাফারির আকর্ষণ
বালিযাড়ির অমোঘ টান, সাম্যবাদের তাস
উইপোকা কুরে কুরে খায় দিন বদলের ডাক
আর্কাইভে পড়ে থাকে, শত শত স্ক্র্যাচ,
শোনা হয় না বহুকাল লং প্লেয়ারের গান।


এখন পকেটে পাঁচশ’ জমলে রিক্সাওয়ালার পা ওঠে
সিটের উপরে, চুমুক দেয় দশ টাকার কনডেন্সড মিল্কের
ধূসর লাল চায়ের কাপে, ঠোঁটে ওড়ে বেনসনের ধোঁয়া,
এখন শ্রমিক নেতা কালো পাজেরোয় টিনটেড গ্লাসে
তেলতেলে মুখ লুকা্য়, সবজি ওয়ালা লুঙ্গির ভাঁজে;
পুষে রাখে আল্লামার নসিহতের পুঁথি, আর আমরা
রোজকার মাইনে হিসেব করে সন্ধ্যাবেলা সন্তানের মুখে
তুলে দেই, পটেটো ক্র্যাকার নয় কিটক্যাট-প্রিঙ্গলস।


অমাদের শৈশব আর তারুণ্যের ঝিকিমিকি দিন
এখন মডেম রাউটার আর স্মার্টফোনের রিংটোনে
বড় বেসুরো পড়ে আছে মস্তিস্কের ধুলোময় তাকে;
আমাদের সব ভালোবাসা এখন জমা আছে
ফেসবুক আর টুইটারের ঝাঁকে, খুঁটে খায় দাঁড়কাকে।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//অবিনাশী সময়
ইং ০৬-১০-২০১৫; মঙ্গলবার; ২১-০৬-১৪২২ বাং//ঢাকা।