বিকেলের ক্ষয়িষ্ণু আলোয় থানচি বাজারের পাশের
ঝুলন্ত ব্রীজের নিচের ঝোপঝাড় অন্ধকার লাগে
পাশ দিয়ে পথচারীর চলায় দুলতে থাকে সেটি
যেমন দুলছে মেয়েটির জীবন, অনিশ্চয়তার দোলাচলে।
ক্ষদ্রাতিক্ষুদ্র আলাপে কথা হলো না তেমন, শুধু শুনি
এক বুক আক্ষেপ ঝরে পড়ে, পড়াটা হলো না
ডিগ্রী পাশের পরে, কী হবে এই অসমাপ্ত পাঠে!


তার সাথে আমার ফের কথা হলো থানচি বাজারে
সন্ধ্যার কিছু পরে, তাদের টং ঘরের পাশে, সান্ধ্য আলোয়
বাজারের সর্বদক্ষিণের ছাউনীর নিচে বসে;
সেখান থেকে তাদের ঘরের ভিতরে দেখা যাচ্ছিল, যেখানে
উনুনের আগুনের লাল আভা মাঝে উজ্জ্বল করে তুলছিল পরিপার্শ্ব।
লেখা পড়ায় ব্যস্ত ছোট ছোট কয়েকজন ভাই-বোন,
সে-ও কম নয়, দ্বাদশ পর্যন্ত পাঠ তার; কিন্তু
পেরে উঠছে না অর্থ কষ্টে, সেটাই মূল কথা, দারিদ্রের কাছে হার ।


মোদক থেকে সে ফিরেছে ক’দিন আগেই, এ বছর পায়নি
পছন্দের পাত্র, পাত্র সন্ধানে আবার একটি বছরের অপেক্ষা,
এখন তার দরকার একটি চাকরী অথবা উচ্চ শিক্ষার কড়ি।
তিন সমস্যার অাবর্তে ঘুরপাক খাওয়া এই তরুনী।
সমাধানহীন সমস্যাকে রান্নার ধোঁয়া ঘিরে ফেলে
অন্ধকার রাত, আরো গভীরতর অন্ধকার হয়ে ওঠে।


রাত পেরোয়, ভোরের ম্রিয়মান আলো ফোটে;
কমলায় বোঝাই নাও ভেসে চলে থানচির পাশ দিয়ে
বগাপাড়া বাজার বা আরো নিচে বান্দরবান শহরে;
দু’পাশে উঁচু হয়ে থাকা পাথুরে পাহাড়
শিক্ষা নয়, তামাক পোড়া ধোঁয়া ও আগুনে
খাক হতে থাকে, আহ্‌, বেনসন হেজেস বা গোল্ডলীফ!
ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো, সবুজ তামাক!
পাহাড়ের গভীরে নেশা! সবুজ নেশায় পুড়ে যায় পাহাড়ী মাটি।
পাহাড়ের গা ভরে ওঠে-শিক্ষার অর্থাভাব অনর্থই ঢালছে এখানে।


আজো বসে আছে মেয়েটি মগজের চৌহদ্দীতে,
হাতে কলমের বদলে কল্কে তামাক-বিড়ি;
তার জন্য কিছুই করতে পারিনি; মস্তিস্কে ক্ষত বাড়ে।
হায় দুরতিক্রম্যতা। হায় ব্যাট-ব্রিটিশ পান বিড়ি!


বট-পাকুড়/বন-বাদাড়/ঢাকা।
০৪ এপ্রিল ২০১৬/সোমবার/২২ চৈত্র ১৪২২