ক’দিন দূরে ছিলাম, গৃহস্থালী কাজে।
ফিরে এসে দেখি সবাই কাজ ফেলে
হাটে মাঠে ঘাটে, কান ধরে বসে আছে
এবং কী অসম্ভব কথা, রবীন্দ্রনাথ থেকে
নজরুল, মাইকেল হয়ে কাজী মোতাহার হোসেন
সবাই কানে হাত দিয়ে বসে আছেন।


ব্যাপারটা কি? একটু খোঁজ নিয়ে দেখি।
কে যেন কাকে কি কারণে যেন কি ধরে কি করিয়েছে
প্রতিবাদে ফুঁসছে জগতব্যাপী জাল
কী মহা-প্যাকাল! আমার এই দেশ কি এখন
অঘটন ঘটন পটুদের কব্জায় চলে গেল!!
বসে ভাবছি, আর ডুবছি, অবিমিশ্র উদ্বিগ্নতায়।


এই একটি সপ্তাহে-কতকিছু যে ঘটল দেশে
আমাদের মহা-মাননীয় স্বদেশমন্ত্রীর ভাষায়
সবই (নির)বিচ্ছিন্ন ঘটনা....বৌদ্ধ পুরোহিত জবেহ্‌
হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি ভাঙ্গা
অতঃপর কান ধরে উঠা-বসা
এ আর এমন কি? ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত!
আমার ধর্ম এখন শিশ্নের চেয়েও স্পর্শকাতর
সুড়সুড়িতে হেসে ওঠার পরিবর্তে, আমি হিংস্রতায়
তড়াক করে লাফিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াই
অতঃপর কৃষ্ণগহ্ববরের খোঁজে হন্য হয়ে উঠি;
স্খলন না হয়ে নেতিয়ে না পড়া পর্যন্ত আমার
এই উত্থান-হন্যতা চলতেই থাকে!


এখন আমাকে আবার ব্যবস্থা নিতে হবে
উত্থান বন্ধ করতে পারিনা বলে হিজাব আর রোরখা
হন্যতা রুখতে পারি না তাই কনডম ও জাকির নায়েক
যদিও পাড়াতে পাড়াতে মহল্লাতে মহল্লাতে চলছে
কোন কোন মুনাওয়ারের জবানে কৃষ্ণলীলার সুরম্য বর্ণনা
ওসব আমার দেবতা নয়, নয় আমার ধর্ম তাই ধর্ম না।


তবুও কিছু কিছু ত্যাঁদোড় নাকি আমার ধর্ম ও বিশ্বাস
নিয়ে কটূক্তি করেছে, তাই কান ধর্‌, উঠ-বস কর্‌,
আচ্ছা উক্তিটা যেন কি? কে শুনেছে? কি শুনেছে?
না শুনুক, আমার মন বলেছে, আমিও যে অর্ধ পীর
আমিও যে অর্ধ পয়, অথবা অর্ধ গম্বর, খোয়াবে সব পাই।
আমি স্বপ্নে পাওয়া বাণীর তেজে পতিতালয়কে
স্থানান্তরে দারুণ জোস পাই, ইমানী জোশ!
সে টান চলে যাক শাসনগাছা নয় পাট গুদাম
ইংলীস রোড চলে যাক দৌলতদিয়া বা.....
স্থানান্তর হয়, গমনেচ্ছু পুরুষরা তিরোহিত হয়না।
ওই যে শিশ্নের বাড়ন্ততা! ওই যে স্পর্শকাতর অনুভূতি!
স্খলনই আমার শেষ পরিণতি!
ভাবি একটি সপ্তাহের ভিতরে কত সপ্তাহ ঘুমায়
একটি অনুভূতির ভিতরে কত শতাব্দী অথবা
কত সুবেশী এরদোয়ান থেকে যায়, সমক্ষে বেরিয়ে আসে।
আমি তবু থেকে যাই মানুষের সারিতে
হাতে ঝোলাব্যাগ, গেরুয়া বসন, রুদ্রাক্ষের জপ মালা
সেতার বেহালা জপমন্ত্র বা ক্রস ব্যাগে ঝুলিয়ে
দুহাতে কান ধরে দাঁড়িয়ে থকি
আমার অক্ষমতার সাইনবোর্ড হয়ে পৃথিবীর কাছে।


বট ও পাকুড় (অতিষ্ট)
০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩/মঙ্গলবার/১৭ মে ২০১৬/ঢাকা