একটি প্রাসাদ দেখছি, ক্ষয়ে ক্ষয়ে ঝুরে ঝুরে পড়ছে
বয়েসী একেকটি ইট, প্রতিদিনই
কখনো দেয়াল থেকে, কখনো কার্ণিশ থেকে,
কখনো ছাদের প্যারাপেট থেকে খুলে পড়ছে
একেকটি কাল পেরোনো কারুকার্যময় নকশাকাটা কাঠ;


প্রাসাদটি নীরবতার অগ্নিস্বাক্ষী, কখনো সেখান থেকে
কোন শব্দ ভেসে আসে না, শোনা যায় না কারো পদশব্দ
বা আক্ষেপময় ধ্বনি, নৈঃশব্দের আরেক সর্বংসহা
মোহনীয় রূপ বুকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে;


প্রতিদিন ভোরে, তার চিলাকোঠার গম্বুজের চিবুক ছুঁয়ে
সূর্যর আগমন ঘটে, সারাদিন তাপদগ্ধ করে,
সন্ধ্যার কিছু আগে একরাশ কোমল বাতাস ছড়িয়ে
শুষে নিতে চায় সব ক্লিষ্টতা, তারপর নেমে যায় ওপারে;


প্রসাদটি নীরবে সয়ে যায়, বয়সের ভারে নুব্জ্য প্রাসাদরক্ষী
ইট খসে পড়া ধ্বংসপ্রায় পুকুর ঘাটে দুপুরে
কিছুটা ‍সময় বুক-পানিতে ডুবে থাকে, যেন তপ্ততার নিবারণ!
তারপর ধীর পদক্ষেপে আলোহীন অন্দরমহলে প্রবেশ করে,
জনমনিষ্যি বলতে একমাত্র তারই দেখা পাওয়া যায় ক্বচিৎ
শোনা যায়, দু-চারটে শব্দ ও স্নানের শ্লোক;


আজ হঠাৎ নৈমিত্তিক কোলাহল থম মেরে থাকে
সকালের সূর্য যথারীতি উঠলেও কিছুটা ম্রিয়মান
বাতাসে অদৃশ্য মেঘের গন্ধ ভাসে, হাওয়া পড়ে যায়,
প্রাসাদরক্ষী আগে ভাগেই জলে নেমে পড়ে
অনেকটা সময় নিয়ে দেহ প্রক্ষালন করে
ডুব দিয়ে সাঁতার দিয়ে কিছুটা সময় পার করে, তারপর
ঘাড় ঘুরিয়ে প্রসাদের দিকে তাকায়, অপলক চোখে;
তার চোখে আশঙ্কা-জল, হতাশ করুন দৃষ্টি!


প্রাসাদটি অস্ফুট কি যেন বলে...যেন বলতে চায়....
‘‘প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প আসছে....এবার ভূলুষ্ঠিত হবে সে
কান পেতে শুনছে যেন তার আগমনী.....দামামা তার
হাওয়ায় বাজছে ..... ভ্যাপসা কোন গন্ধ নাকে লাগে,
প্রাসাদরক্ষী এবার চীৎকার করে ওঠে যেন,
‘‘গাছের পাতা যখন নড়ে না, ঝড়ের ভয় ঠিক তখনই।’’
কেউ কি তার কথা শুনতে পায়? দীঘির জলের কল্লোলে
মিশে যায় তার আপ্ত-বাক্য....প্রাসাদটি কিন্তু শোনে
প্রাসাদটি অপেক্ষায় থাকে-ভূমিকম্প নাকি ঝড়!
                               ধ্বসে পড়া নাকি ‍পুনরুত্থান!
প্রকৃতির ডাকে মানুষের সাড়া, নাকি
মানুষের আহ্বানে প্রকৃতির সাড়া.....সময়ের অপেক্ষায়।


বট ও পাকুড় (অাখ্যান)/ঢাকা।
৪ শ্রাবণ ১৪২৩/মঙ্গলবার/১৯ জুলাই ২০১৬।