আগের দিনগুলোই ভালো ছিল, বিরতি বেশি ছিল, কিন্তু দূরত্ব কম ছিল,
লুকোচুরিটা আজও খেলছি;আগে খেলা শেষে ধরা দিতাম, এখন ধাপ্পাগুলোই হারিয়ে গেল।
একটা বাড়ির ছোট্টো খোপে দশ-বারোটা হাত পা, একে অপরের উপরে চেপে থাকত,
এখন একই ঘরে অনেক পরিবার ,তাই সব বিষয়ই হয়েছে ব্যাক্তিগত।
তখন অতো পকেটমানি টানি ছিল না, খেতে ইচ্ছে হলে,মার কাছে চাইতাম,দু-টাকা,
ওতে খোকনদার দোকানের চানাচুর, আমপাচক, মধু চুকচুকি কিনেও, হতো না পকেট ফাঁকা।
যাইহোক, এখন মানুষ গুলোর ইচ্ছে পূরণের ক্ষমতা হয়েছে,কিন্তু মানুষগুলো ভিড়েও একা,
এখন সবাই এতটাই ব্যস্ত,সামনে থাকলেও,চোখ মিললে মাথা নাড়া আর চুপচাপ বসে থাকা।
হাফ প্যান্ট আর জামা,পা এ চটাক -চটাক চটি,এই তো ছিল শৈশব,
আজ রাস্তা পাকা, চপ্পলের ফিতেগুলো রাস্তার দু-পাশে উঁকি মারে,হারিয়ে বৈভব।
গ্রামে ধুকলেই একটাই কথা ছিল, তুই অমুকের ব্যাটা না ? কত বড়ো হয়ে গেছিস,
আগে বিরক্ত লাগলেও, এখন মন বলে ওই স্মৃতিগুলোই ফেলে এসেছিস।
মুর্শিদাবাদের একটা এঁদো গ্রাম, যেখানে ফোন ছিল,কিন্ত নেটওয়ার্কের বাহিরে,
তবু কিভাবে যে পুজোর চারটেদিন কেটে যেত, তার হিসেব নাইরে।
দেখতে দেখতে ছাব্বিশটা বছর পার, শৈশব বোতলবন্দি হয়ে গেল,
আর ফিরবে না সেই সব দিন, জীবনের একটা অধ্যায় শেষ হল।
আর ফিরবে না ,দশমীর দিনে ঢাকের তালে হাত পা ছুড়ে ভাসান নাচ,
হঠাৎ কেউ বলত,ওই দেখ,;তোর মামা আসছে, ব্যাস কপালে পড়ত ভাঁজ।
মামার ভয়ে সেই যে ভিড়ে হারালাম, মামার বাড়িটা খুঁজে পেলাম না আর,
মামাবাড়িতে এখন পাকা উঠোন,কিন্তু গোবর লেপার গন্ধ,সিমেন্টের কাছে মেনেছে হার।
আগে ট্রেন থেকে নেমে ,এক ঘন্টা ধরে নন্দর টলিতে চেপে এসেছি মামার বাড়ি,
এখন চার চাকা পৌঁছায় দরজায়, তাই সবুজে ঘেরা গাঁ, কালো কাঁচে দেয় পাড়ি।
এত বছর পেরিয়ে,এখন গ্রামটাকে ভালোবেসে শহর উপহার দিতে চাই,
ভুলে গেছি, গ্রামটার প্রেমেই পড়েছিলাম,সাজাতে গিয়ে তাকেই না হারায় ?