খুব বেশি মনে পড়ছে বাবার কথা
তখনও খুব ছোট আমি
হয়তো আধো আধো কথা
আর একপা দুপা করে হাটতে গিয়ে পড়ে যাওয়া
কষ্টের কান্না পাওয়া,
দেখতাম বাবা দুহাত দিয়ে কাঁধে নিয়েছেন আমায়
ঘাম ঝরছে তখনও গা বেয়ে
আর কপালের ভাজের মতো ছেঁড়া কষ্টরা লুকায়
অনেকদিন পড়ে থাকা গন্ধে বুদ্ হয়ে থাকা জামায় |
বাবার হাতটা শক্ত হাতুড়ির মতো হয়ে গিয়েছিলো
আমার নরম হাত,
সে হাতের উপর কঠিন পাথর যেন হাত দিলো
বাবার মুখে তখন পৃথিবী পাবার হাসি
সব হারিয়ে যে পথের কাংগাল
দুঃখকে বুকে চেপে সে বলতো আমায় "বাজানরে বাজান আমার
তোকে বড় ভালোবাসি "
বাবার রাত দিন যেন এক হয়ে যায়
তবু জজ ব্যারিস্টার করবে বলে আমায়
সারাদিন ঘানিটানা রক্ত দুঃসহ যন্ত্রনায় পানি হয়ে মাটিতে গড়ায় |
মা ছেড়ে চলে যান ওপারে
তারার দেশে,
নিঃসঙ্গ বাবা চম্বুকের মতো আঁকড়ে ধরে আমায়
এতটা অসহায়,
দেখিনি কখনো বাবা তোমায়
তা হয়তো লেখা থাকবেনা কভু জীবন পাতায় |
কষ্টে কাঁদেন বাবা
পুরাতন ছেঁড়া ময়লা লুঙ্গিটা দিয়ে চোখ মুছে অগোচরে
হয়তো নির্জন রাতে কিংবা জনশুন্য কাক ডাকা ভোরে |
সময় গড়ায়
ডালপালা হাত পা ছড়ায়,
আমি আজ বড় মানুষ বাবার কষ্টের ঘাম ঝরা টাকায় |
এখন আমি যেন আমাকে নিয়েই ব্যস্ত
বাবা তোমাকে কি ভুলে গেছি আমি
জানালায় হাত দিয়ে তাকিয়ে থাকো বোবার মতো আকাশে
হয়তো মাকে খুঁজো কিংবা ফিরে যাও আমার শৈশবের ইতিহাসে
অথবা শিশিরভেজা বুকচাপা বাতাসে উড়া সবুজ ঘাসে |
এখন আমি খুব বেশি সংসারী
খুব বেশি হিসেবি,
ইটের পর ইট গেথে বহুতল দালান আমার
সব এসে গেছে জাদুর মতো, নেই আর কষ্টের আহাজারি
আছে বৌ, ছেলে মেয়ে আর কোটি কোটি টাকায় কেনা দামি গাড়ি
যেন মাটি ছেড়ে আমি আকাশ দিয়েছি পাড়ি |
আবেগ আর অনুভূতিগুলো কেমন করে যেন মরে গেলো
যে বাবার জীর্ণ মুখের হাসি আর পাথরে হাত দিয়ে বড় হওয়া
তাকে মনে হলো বড় প্রাচীন আর আমার দামি মার্বেল পাথরে
গড়া প্রাসাদের দারুন চাকচিক্যে একটা অযাচিত বোঝা
এবার স্বার্থপর মন বৃদ্বাশ্রমে পাঠালো তাকে সোজা
আমার যেন আর স্বাধীনতা মজা বড়োই মজা |
একদিন আমার বাবা এলো বাড়িতে
জীবন্ত বাবা নয়, মৃত দেহ তার
বুকটা কম্পিত হলো, শৈশবের মতো কেঁদে উঠলো আবার
বাবার চোখে আর স্বপ্ন নেই, হাসিটাও ম্লান হয়ে গেছে
মুখটা কংকাল আর কাঙালের মতো যেন
খুঁজেছে আমার কোমল তুলতুলে হাত
বাবা আমি কি তোমার সেই ছেলে
নাকি স্বার্থপর আর ধান্দাবাজ !
বড় অসহায় মনে হলো নিজেকে
বিবেকটা আটকে পড়লো যন্ত্রনায়
বোবা কান্না গুলো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বললো
বাবা, বাবা আমার বাবা তুমি কোথায়
সব আছে তবু আজ আমি যেন মিসকিন
আর অর্বাচীন |
কিছু নয়
দেখলাম নিজেকে আয়নায়
একটা স্বার্থপর মুখ ছিঁড়ে খাচ্ছে তেলাপোকায়
যেখানে মানুষ নেই আছে বেজন্মাদের কথা লেখা
পাপের নরক যন্ত্রনায়
কিংবা অভিশপ্ত জীবনের কঠিন সত্যের পাতায়
ছেলে হতে পারিনি আমরা
এবার যদি পারি ছেলে হয়ে জন্মাতে চাই
জীবনের আলোকিত সন্ধ্যায় |