যদি পারো
যদি মনে হয় তোমাদের
কখনো,
ছুঁড়ে ফেলো আমাকে কোন এক নির্জীব আস্তাকুঁড়ে,
যেখানে জীবনের ভিতর ফাঁপা কান্নার শব্দগুলো
অর্থহীন কাগজের চোরাবালিতে পুড়ে পুড়ে
চলে যায় দূরে বহুদূরে,
এক পালক পাখির নূপুরে,
কোনো এক নিঃসম, নির্বাক খল নায়কের মধ্য দুপুরে,
পানি থৈ থৈ জননন্দিত পুকুরে |
আমি তো মানুষ নই
হয়তো মানবতা,
আমি তো কবি নই
হয়তো কাব্য কথা,
তোমরাই নাকি মানুষ
কখনো সাজো মহামানব আর কখনো দানব,
যাদের মন নেই, প্রাণ নেই, দেহের ভিতর
মাংস পিন্ড নেই, হাড় নেই,
নিরঙ্কুশ অধিকারের অহংকার নেই |
আছে শুকুনির অমঙ্গলের চোখ
অভিশপ্ত মহারাজের মহাভোগ,
আছে পদদলিত উন্মাদনার সংকীর্ণ রাজপথ
আর নিজ স্বার্থে সংবেদনশীলতার চক্রাকার অবরোধ |
অরক্ষিত মানুষ আর মানবিক নগর
ভেঙে ফেলে স্বপ্ন আর দুহাতে গড়া স্বপ্নের ঘর ,
একদলা কাদা জীবন্ত মাটি থেতলে যায়
তোমাদের নিষ্পেষিত হুংকারের প্রতিধ্বনিতে,
যেখানে জীবনের মরণ হয়,
তোমাদের মতো মানুষদের রং বদলের খনিতে,
কিংবা গোখরা সাপের খুব দামি চন্দনমাখা মণিতে |
তারপরও জীর্ণ আমি
মাথা তুলে দাঁড়িয়ে যাই,
নর্দমার ঢাকনা খুলে জীবনের দুর্গম যাত্রাপথে
মানুষের মহামিলনের মহাসংগীত গড়ার লড়াই
চালিয়ে যেতে চাই,
হয়তো তোমাদের কাছে আমি মানুষ নই,
কিন্তু আমি তো জানি আমি কোনো যন্ত্রও তো নই.
তবু যতক্ষণ আছে এই মন
ততক্ষন আমি মানুষ নই
যতক্ষণ আছে মানবতা,
জীবন মুখী হাহাকার সত্যের বাস্তবতা
ততক্ষন আমি মানুষ নই,
আমি উল্কাপিণ্ডের মতো সূর্যের দীপ্তমান
কবিতার লেখা ছেঁড়া কোনো প্রাচীনতম সভ্যতার পাথরের বই
থমকে দাঁড়ায় দেখে তোমাদের অবিমিশ্রিত অবক্ষয় |
হয়তো তোমরা আমাকে চেনোনা
কিংবা চিনলেও না চেনার ভান
অদ্ভুত বিকৃত অভিনয়,
আর অন্যকে জ্বালাতে গিয়ে নিজের আগুনে
পোড়া কাঠ কয়লা দাঁড়িয়ে আত্মকথন কয়,
তোমাদের সময় বদলে গেছে
এখন এসেছে সুতীব্র সুচিন্তার সময়,
যারা তোমাদের কাছে হয়তো মানুষ নয়,
যারা হিংস্র দানবের সামনে মেরুদন্ড শক্ত
করে অহিংস মানুষ হয়ে দাঁড়ায় |
যাদের উদার হাত প্রাচীর ভেঙে গড়ে জীবনের জয়গান,
তাদের কাছে মানুষ যতনা বড়,
তারচেয়েও বড় মন আর স্বপ্ন জাগানিয়া নন্দিত প্রাণ
অফুরান,
যাদের শুভ পদযাত্রার মিছিলে রচিত হয় দিন বদলের আহবান |
পিছে পরে থাকে মরীচিকা, পুরোনো সময়
এগিয়ে যাই মন, মানুষের চেয়ে
কখন কে জানে,
কেউ মানেনা কেউ মানে,
তারপরও বীরোচিত মহাপুরুষের মতো
সচলায়তন গন্ডি পেরিয়ে,
আত্মবিশ্বাস আর মনের বিস্মরণের বিজয়
ক্ষয়ে ক্ষয়ে হয়ে যাই একসময় অমৃতের মতো অক্ষয়
নির্ভয় আর আলোকিত অভ্যুদয়,
আর তখন মুহূর্তেই
কোনো এক মহাকাব্যিক সন্ধিক্ষণে
আর নির্ভেজাল বিশুদ্ধতার মহারণ্যে
জয় হয় জীবনের,
জয় হয় খরস্রোতা জলে ভাসা জল পদ্মের
জলতরঙ্গের,
আর কাক ডাকা নির্মল সবুজ ভোরের |