বাংলা ভাষার বিশ্বজনীন ব্যবহার আমাদের জন্য একটি গৌরবের বিষয়। ভাষা মানুষের চিন্তাশীলতার মাধ্যমে বিকশিত হয়ে বিশ্বজনীন হয়ে ওঠে। বিভিন্নভাবে এ চিন্তাশীলতার বিস্তার ঘটে।


‘বাংলা ভাষা-পরিচয়’ গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ ভাষার কাঠামোকে কোঠাবাড়ির সঙ্গে তুলনা করেছেন। বিষয়টি এ রকম : “কোঠাবাড়ির প্রধান মসলা ইট, তার পরে চুন-সুরকির নানা বাঁধন। ধ্বনি দিয়ে আঁটবাঁধা শব্দই ভাষার ইট, বাংলায় তাকে বলি ‘কথা’। নানারকম শব্দচিহ্নের গ্রন্থি দিয়ে এ কথাগুলোকে গেঁথে গেঁথে হয় ভাষা।”


এমনই একটি সমৃদ্ধ ভাষা বাংলা। এ ভাষাকে মননে ও চেতনায় লালন করে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘বাংলা ভাষাকে তাহার সব ধরনের মূর্তিতেই আমি হৃদয়ের সহিত শ্রদ্ধা করি, এ জন্য তাহার সহিত তন্ন তন্ন করিয়া পরিচয় সাধনে আমি ক্লান্তিবোধ করি না।’ বাংলা ভাষা এখন বাংলাদেশ ও বাঙালির পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে চারটি মহাদেশের ত্রিশটি রাষ্ট্রের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। আবার সারা বিশ্বে বাংলা ভাষায় রচিত ভিন্ন ভিন্ন ধারার সাহিত্য নিয়ে গবেষণা চলছে।


বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণা ও চর্চা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, পোল্যান্ড, রাশিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, চেক রিপাবলিক, কানাডা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।


সবচেয়ে আশাবাদী হওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে, চীনা ভাষায় রবীন্দ্ররচনাবলির ৩৩ খণ্ডের অনুবাদ থেকে শুরু করে লালনের গান ও দর্শন ইংরেজি ও জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সোভিয়েত আমলে রুশ ভাষায় রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মের ব্যাপক অংশের অনুবাদ হয়েছে।


সাম্প্রতিক এ ধারা অব্যাহত থাকায় গবেষকরা মনে করছেন- ইংরেজি, চীনা ও জাপানি ভাষার পর বাংলা ভাষা নিয়ে বিশ্বের আগ্রহ যেমন বাড়ছে, তেমনি এ ভাষার প্রসার ও চর্চা বেড়ে চলেছে।


বাংলা ভাষাসংক্রান্ত বহুমাত্রিক এ গবেষণাগুলোতে বিদেশি গবেষক ছাড়াও বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের গবেষকরাও যুক্ত আছেন। বাংলা ভাষা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হলেও এ ভাষার বিস্তার সারা বিশ্বে কীভাবে সম্ভব তা নিয়ে তেমন গবেষণা নেই; কিন্তু ইংরেজি, জাপানি, চীনা, রুশ, জার্মান বা ফরাসি ভাষার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর মাধ্যমে কীভাবে বিশ্বব্যাপী এগুলোর বিস্তার ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ ঘটানো যায় তার গবেষণা হয়েছে এবং তা এখনও হচ্ছে।


কিন্তু আমাদের ভাষার প্রাচুর্য ও প্রয়োগের ক্ষেত্র অন্য ভাষাগুলোর চেয়ে বেশি থাকা সত্ত্বেও তার মৌলিক ও ফলিত গবেষণা, গবেষণালব্ধ ফলাফল বিশ্লেষণ ও তার প্রায়োগিক দিকটি নিয়ে আমরা সেভাবে ভাবিনি। তবে এখন তা নিয়ে ভাববার সময় এসেছে।


আঠারো, উনিশ ও বিশ শতকে ইংরেজ, জার্মান ও ফরাসি জাতি সামরিক শক্তির মাধ্যমে এশিয়া আর আফ্রিকার বহু দেশ দখল করে নেয়। সে জায়গা থেকে সরে এসে এসব বড় শক্তি এখন মনে করছে, এ একবিংশ শতাব্দীতে সামরিক শক্তি দিয়ে নয়, বরং ভাষা আর সাংস্কৃতিক প্রভাব সৃষ্টির মাধ্যমে অনেক সহজেই একটি দেশকে প্রভাবিত করা যায়।


রাষ্ট্র দখলের দর্শন মানুষের মধ্যে কাজ করে না বরং অন্য একটি দেশের অর্থনীতিতে কীভাবে প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের সমৃদ্ধ করা যায়- এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কারণ সময়ের পরিক্রমায় সামরিক শক্তিধর রাষ্ট্রের চেয়ে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হওয়ার ধারণা মানুষকে বেশি প্রভাবান্বিত করছে।


ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে অর্থনীতির একটি নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। যদি বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে না দেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখা হয়, তবে ভাষা ও সংস্কৃতির প্রসার অর্থনীতির প্রসারকে যে প্রভাবিত করে সেটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়।


নেতিবাচক দিকটি হল ভাষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক আগ্রাসন ও আধিপত্য বিস্তার; পক্ষান্তরে ইতিবাচক দিকটি হল নিজের ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে পারস্পরিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। নেতিবাচক ধারণাটি বাঙালিরা পোষণ করে না।


কারণ বাঙালিরা জানে মাতৃভাষাকে আঘাত করে বিদেশি একটি ভাষার আধিপত্য যখন অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়, তখন তা একটি জাতির আবেগ আর মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করে। এ মনস্তাত্ত্বিক উদারতার ওপর ভিত্তি করে অন্যরা যখন ভাষা ও সংস্কৃতির আগ্রাসনকে অনুপ্রাণিত করার কৌশল অবলম্বন করছে, বাঙালিরা তখন বিষয়টিকে অন্যভাবে চিন্তা করছে।


যেখানে ভাষার মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তারের বিষয়টি মুখ্য না হয়ে বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্য ও সৃষ্টির বিভিন্ন ধারা কীভাবে পৃথিবীর অন্য প্রান্তের মানুষের মধ্যে ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে সেই বিষয়টি মুখ্য হয়ে উঠেছে।


আমরা চাই পৃথিবীর মানুষ বাংলা ভাষার গভীরে প্রবেশ করে সৃষ্টির বৈচিত্র্য ও চিন্তাশীলতার প্রকৃত আস্বাদনের মাধ্যমে এ ভাষায় অভ্যস্ত হয়ে উঠুক। বাঙালিদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমেও এ ভাষার প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হয়েছে।


জাতিসংঘের শান্তি মিশনের অংশ হিসেবে সিয়েরা লিওনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়মিত সামরিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনার জন্য সেখানকার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে আস্থা ও নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার চেষ্টা করে।


মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সাধারণ সেনারা ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাও ব্যবহার করতে থাকেন। সেখানকার জনগোষ্ঠীকে আন্তরিকতা ও আস্থা নিয়ে বাংলা ভাষা শেখাতে শুরু করেন। সাধারণ মানুষ বাংলা ভাষাকে খুব আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করে।


এর সঙ্গে বাংলা সংস্কৃতির প্রতি তাদের নিবিড় বন্ধন গড়ে ওঠে। লক্ষ করা যায়, যেখানেই বাংলাদেশি সেনাদল আছে, সেখানেই স্থানীয়রা বিশেষত তরুণ-তরুণীরা বাংলায় কথা বলতে পারছে।


বিভিন্ন সভায় স্থানীয়রা বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয়দের বাঙালি নাচ ও গান পরিবেশন করতে দেখা যায়। বাংলাদেশ সেনাদলের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সিয়েরা লিওনে বাংলা ভাষা জনপ্রিয়তা পায়।


স্থানীয়রা কাজ চালানোর মতো বাংলা ভাষা শিখে নেয়ার ফলে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং দেশ পুনর্গঠনে বাংলাদেশ সেনাদল অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে যায়। ২০০২-এর পরে দেশটিতে শান্তি ফিরে আসে। প্রেসিডেন্ট আহমাদ তেজান কাব্বাহ বাংলাদেশি সেনাসদস্যদের ভূমিকাকে চিরস্মরণীয় রাখতে বাংলা ভাষাকে দেশটির সরকারি ভাষার মর্যাদা দিলেন।


এভাবে বালাদেশের সেনাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মাত্র কয়েক দশক আগেও সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি ভাষা অপরিচিত একটি মহাদেশে হয়ে উঠছে অন্যতম ‘শক্তিশালী’ ভাষা।


যখন বিদেশে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে মানুষ আত্মিকভাবে গ্রহণ করে তখন ভাষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে বাইরের মানুষের সঙ্গে বাঙালিদের মানবিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যদিও রাষ্ট্র ও জাতি হিসেবে তাদের নিজস্ব ও স্বতন্ত্র পরিচয় রয়েছে। এ মানবিক ও আত্মিক সম্পর্কের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের প্রতি আকৃষ্ট হয়।


ফলে সময়ের পরিক্রমায় এ মানবিক ও কল্যাণমুখী সম্পর্ক অর্থনৈতিক সম্পর্কে পরিবর্তিত হয়। যার মাধ্যমে একসময় বাংলাদেশ থেকে সেখানে বিভিন্ন শিল্প রফতানির পরিবেশ গড়ে উঠবে এবং তারাও বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।


অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ রিচার্ড এইচ থ্যালার ও ভারতের অমর্ত্য সেনের মানবিক উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতির উৎকর্ষ সাধনের বিষয়টি এ ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। তবে ভাষা যে মানবিক আচরণকে প্রভাবিত করে এটি গবেষণায় নতুন উপাদান হিসেবে যুক্ত হয়েছে।


এ জন্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাকে বিদেশের মাটিতে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যখন গবেষণার উপাদানে পরিণত হবে, তখন বিদেশিরা এ গবেষণায় নিজেদের সম্পৃক্ত করতে অনুপ্রাণিত হবে। আশার কথা হচ্ছে, উনিশ শতক থেকেই যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের প্রাচ্যবিদ্যা ও ভাষাচর্চা বিভাগ বাংলা নিয়ে গবেষণার কাজ করছে।


এখানে বাঙালি গবেষকদের সঙ্গে জেডি অ্যান্ডারসন, টি ডব্লিউ ক্লার্ক, জন বোল্টন, উইলিয়াম রাদিচে, হানা রুথ টমসনের মতো গবেষকরা গ্রুপভিত্তিক গবেষণা করছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অদিতি লাহিড়ী দীর্ঘ সময় ধরে বাংলা রূপতত্ত্ব ও ধ্বনিতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দশটি বিশ্ববিদ্যালয় ও এশীয় গবেষণা কেন্দ্রে বাংলা ভাষার চর্চাকেন্দ্রিক কার্যক্রম অব্যাহত আছে।


এ ক্ষেত্রে নিউইয়র্ক, শিকাগো, মিনেসোটা, ফ্লোরিডা, মেরিল্যান্ড, ক্যালিফোর্নিয়া, ভার্জিনিয়া, উইসকনসিন ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জাস্টিন আলফান্সো চাকোন বাংলা ভাষার অর্থপ্রকাশে মনস্তত্ত্বের প্রভাব; নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের মারিয়া হেলেন বেরো নজরুল সাহিত্য; ক্লিনটন, বি সিলি জীবনানন্দ দাশ ও তার কবিতা, যুক্তরাজ্যের কবি ও গবেষক উইলিয়াম রাদিচের রবীন্দ্রনাথের অনুবাদ নিয়ে গভীরভাবে গবেষণার কাজ করছেন এবং এ বিষয়গুলোতে সফলতা লাভ করেছেন।


যুক্তরাষ্ট্রে বাংলা ভাষার চর্চা ও গবেষণার মাধ্যমে এর প্রসার ঘটাচ্ছেন সে দেশেরই গবেষকরা। শেখানোর বাইরেও গবেষণা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ ও লালন সাঁইকে নিয়েও। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে যেসব গবেষক কাজ করছেন তাদের মধ্যে ক্লিনটন, বি সিলি, র‌্যালফ নিকোলাস, ক্যারল সলোমন, ক্যারোলিন রাইট, হেনরি গ্লাসি উল্লেখযোগ্য। মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য, লালন সাঁই এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে প্রচুর গবেষণার কাজ অব্যাহত আছে।


কানাডার জোসেফ ও’কনেল, রাজেন্দ্র সিংহ এবং ভ্যাংকুভারে ব্যারি মরিসনসহ বেশ কয়েকজন বাংলায় শিক্ষাদান ও গবেষণার কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের বিভিন্ন গবেষণাপত্র বাংলা ভাষার বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রাচুর্য তুলে ধরায় সে দেশের মানুষসহ অনেক দেশে এ ভাষার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। চীন, জাপান, রাশিয়া, জার্মানি- এ দেশগুলো তাদের ভাষায় বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল প্রকাশ করে। কিন্তু বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল প্রকাশের উদ্যোগ এখনও তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।


যদি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্বমানের জার্নাল প্রকাশ করা হয়, তবে এতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা গবেষণাপত্র জমা দিতে পারবেন। বাংলা ভাষায় একজন শিক্ষার্থীর গবেষণাপত্র লেখা যত সহজ ও প্রকৃত বিষয়কে তুলে ধরা সম্ভব হবে তা ইংরেজি বা অন্য ভাষায় সম্ভব নয়।


এখন প্রশ্ন হতে পারে, এ গবেষণাকে কীভাবে বিশ্বজনীন করা যাবে। এ জন্য যারা এ জার্নাল প্রকাশের উদ্যোগ যারা গ্রহণ করবেন, গবেষণার প্রকৃতি অনুযায়ী তাদের বাংলায় লেখা গবেষণাপত্রগুলোকে প্রতিথযশা বাঙালি বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে ইংরেজি বা অন্য ভাষায় অনুবাদ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য তার ছাত্রদের কাছে রাশিয়ান বিজ্ঞানী মেন্দেলেভের কথা বলতেন, যিনি পিরিওডিক টেবিলের আবিষ্কারক।


বিজ্ঞানী মেন্দেলেভ তার কাজ রাশিয়ান জার্নালে প্রকাশ করতেন, কারণ তিনি চাইতেন পৃথিবীর অন্য ভাষাভাষী বিজ্ঞানীরা যেন রুশ ভাষা শিখতে বাধ্য হন। বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি ভাবা যেতে পারে। বাংলা ভাষার বিস্তারে বাংলাদেশ সরকারও বিভিন্ন ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে চলেছে। তার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দিকটি হল বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ ও প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ইউনেস্কো বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।


২০০৯ সালের পর থেকে এখন প্রতিবছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে এবং প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দফতরে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়ে আসছে।


বাংলাদেশ সরকারের সক্রিয় ভূমিকার ফলে জাতিসংঘ বাংলায় একটি নিয়মিত রেডিও অনুষ্ঠান চালু করেছে, এটি জাতিসংঘের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের মানুষ শুনতে পারেন। এ ছাড়া জাতিসংঘ সদর দফতরের ভেতরে শহীদ মিনারের একটি রেপ্লিকা স্থাপনের উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে।


স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথমবারের মতো বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে বিশ্বদরবারে বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। বাংলা জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা ঘোষণা করা হোক, এ প্রত্যাশা বাংলার মানুষের।


বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা এবং গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কীভাবে মানবিক আচরণ ও মনত্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে অর্থনীতির যোগসূত্র তৈরি করা যায় সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। তবেই দেশ ও মানুষ এগিয়ে যাবে।