ঋতু রংগশালায় রুপসী বাংলার অনুপম রুপ বিস্তর,
অন্তহীন রুপের খেলা রঙের  মেলা।
চলে ঋতুর পর ঋতুর নিরবিচ্ছিন্ন বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা,
প্রতিটি ঋতু তার আপন বর্ণ বিকশিত করে।
সবশেষ রুপ বিস্তারের স্মৃতিটুকু নিষ্ঠুর হাতে নিঃশেষে মুছে লয়ে,
আবার বিদায় গ্রহন করে।


                      (১)
ধু ধু রুক্ষ দু'চোখে বহ্নিজ্বালা রৌদ্র লয়ে,
মৌন তাপস গ্রীষ্মের আগমন ঘটে।
নিদাঘ সূর্য দাব দাহনের অসহ্য জ্বালাময়ী তীর ছুড়ে,
ধরিত্রীর বক্ষ বিদীর্ন হয়ে যায় সূর্যের প্রখর শাসনে।
ফুটি ফাটা হয়ে যায় দিগন্তময়ী প্রান্তর,
চারদিক ধু ধু মরুভূমির মরিচীকার বিস্তার।
অপরাহ্নে ডেকে যায় কালবৈশাখী,
সেই রুপ ভয় চোখে দেখে নেয় বাংলাবাসী।
ফুল ফুটানো তার কাজ নয়,
ফলের ডালা সাজাতেই ব্যস্ত সারাবেলাময়।


                    (২)
বজ্রবিদ্যুৎ আর মেঘের কাল হাত ধরে,
বর্ষা তার আগমন বার্তা ঘোষনা করে।
ঘনকালো পুঞ্জীভুত মেঘের অপূর্ব বিন্যাস আকাশে,
মহাউল্লাসে মেঘের বিদ্যুৎ গর্জন।
শুষ্ক মাঠ, নদী নালা, খালবিল প্রান্তর,
প্রবল প্রাণোচ্ছাসে জাগে বহুদিন পর।
বর্ষার পালাগান গেয়ে পথে পথে কদম্ব কেশরের স্মৃতি ছড়িয়ে,
বাংলার প্রকৃতিকে কাঁদিয়ে সুন্দরী বর্ষা বিদায় গ্রহন করে।


                   (৩)
বর্ষণ ধৌত মেঘমুক্ত গন্ধে নদী তীরে কাশফুলের অপরুপ সমারোহ,
প্রভাতের তৃণ পল্লবে নব শিশিরের আলিঙ্গন।
চাঁদের শুভ্র জোসনায় আলোকিত রাত্রি,
ঝিলে বিলে শাপলা শালুক পদ্ম ফুলে জলসা আসর।
চারদিকে রুপের অপরুপ দুয়ার খুলে যায়,
ব্যর্থ মনে নব প্রেমের সঞ্চার ঘটায়।
বাংলার রুপ লাবন্য যেন কানায় কানায় পূর্ণ।
শরৎ স্পর্শ করে বিশ্ব হৃদয়।


                  (৪)
ধূসর কুয়াশায় মুখ ঢেকে নিঃসঙ্গ সাধনায় মগ্ন প্রকৃতি,
এ সাধনা তার মাঠে মাঠে ফসল ফলাবার।
হেমন্তে ক্ষেতের ফসল কাঁচা সোনার বর্ণ,
কৃষক কৃষানীর আঙিনা জুড়ে ব্যস্ততার তুমুল হাসি।
রুপের জৌলুসে নাই ফুলের বাহার,
নাই অফুরন্ত প্রাচুর্য রুপসজ্জায়।
শুধু সোনার ফসলে পরিপূর্ণ করে বাংলার গোলা,
কুটির আঙিনায় ঐশ্বর্য্য রাশি রাখা।


                  (৫)
শিশিরের নিঃশব্দ চরণ,
পূর্ব দিগন্তে আলোর সুষমা পরিপূর্ণ।
পাখিদের হৃদয়ে সুরের আবাহন,
কুয়াশার আস্তরন ভেদ করে আলো ছড়ায় সূর্যি মামা।
উত্তরের হিম শীতল হাওয়া শিশির সিক্ত দূর্বাঘাসের বুকে,
মুক্তোর মত আলোর ঝলকানি।
মৌমাছি গুন গুন শব্দে হলুদ সর্ষে ফুলের পানে,
কৃষানীরা ব্যস্ত নবান্নের তরে।
খেজুর রসের হাড়িতে রসের গোলক,
পিঠা, পায়েশে জমে উঠে আত্বীয় উৎসুক।
পত্রঝড়া বনভুমি কি বিবর্নতায় এক চরম শুন্যতা,
জলাশয়ে জলের অভাব।
ধান কাটা মাঠে আজ সীমাহীন শুন্যতা,
ত্যাগের কি অপরুপ রুপ মহিমা।
                    
                    (৬)
আসে পুষ্প পর্যাপ্তির লগ্ন শূন্য জীবন ভরে উঠাতে,
বন তরুর রিক্ত শাখায় কচি কিশলয়ের অফুরন্ত উজ্জল সমারোহ।
বসন্তের দক্ষিনা বাতাসে মর্মর ধ্বনি,
কোকিলের কুহু কুহু গীতে কি অপূর্ব মায়ালোক।
পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম উচ্ছাসে,
নব যৌবনার আগমন ঘটে।
ফুল ফুটিয়ে ফুল ঝড়িয়ে বাংলার বুক রিক্ত করে,
রুপনায়ক ঋতুরাজ বসন্ত যায় চলে।