জলের মমি
----------
সমস্ত রাত জুতোর ফিতেয় বাঁধা নির্জন
বারান্দাটা আজীবন কুড়োয় অন্ধের পান্থপথ,


আমার হাড়ের ছাড়পত্র জানে
যে চোখে পাথর চোখ নামিয়ে হয় নারী,
নিরবতার দুরত্ব কমিয়ে তুমিই আমার
মুছে ফেলা কল্পনার বংশধর
বানকুড়ালি পুতুল।


স্বপ্নের শেষটুকু নিভে গেলে পরিত্রাণহীন
একটি শরীর ঠিক পাহাড়ের মাঝখানে
নেমে নেমে এখন হাওয়ার পুকুর।


দুর্দিনে
--------
জন্মের পর থেকেই মরনটাকে রূপকথার আঁচড় মনে করে
দিনরাত ভাবি শিমুলতলার এ- পথে ও- পথে উদাস ঘোড়ায়
ঘুরে ঘুরে নদী- নক্ষত্র- পাহাড়- ভৌগলিক আড়াল মুছে
আকাশের আরও উঁচুতে ইশারায় সাজাবো খোয়াবনামা;
পিপড়েদের গুঁড়ি গুঁড়ি গর্তবাড়ি পূর্বজন্ম খুঁড়ে হয়তো পাবো
অতিক্রান্ত ভুলের ভিতর বাহির অন্তর ব্যর্থতার তুলকালাম আলিঙ্গন;


চরিত্রহীন মস্তিষ্কে শেষ রাত্তিরে কলঙ্কিনী কবিতা হবে
আমার পাপ শোকের আমৃত্যু স্বীকরোক্তি,
চোখের জল শুকিয়ে গেলে চিরনিদ্রায় শামুকের বুক
খুলে কবিতাই হবে অন্যমনস্ক অন্ধকার চুমো ঘাম-
উত্খাত - আমার ব্যক্তিগত ডায়েরির হাহাকার ফ্যাসিবাদ।


হরিত রেখা ভরে উঠা জল-রহস্য
----------------------------
চিঠি ফেরত কবুতরগুলো অবেলার গ্রাম দিগন্ত
ফাঁকা করে নিয়ে আসত একটা নড়বড়ে মহাকালের উড়াল,
চৈত্র মাসের আগুন কুয়াশায় ক্রমাগত গা পুড়িয়ে
তুলোর ব্রাশ ঘষে খসে পড়ত সন্ধ্যাকালীন বিষাদ- সম্পর্ক,


আমার পা দুটো যেন ভাঙ্গা দেয়াল মাঝে মরুভূমি এতকিছু
নিজেকে অচিন বনের গুপ্তচর ভেবে চেয়ার টেনে মাঝরাতে
ফেলে দিতাম বুকভর্তি জল-বারান্দার আঁচল,


চুল সর্বস্ব সংস্কারহীন একটা অজানা ছাদ প্রাচীন নিঃশ্বাস
ভরে থেমে থেমে নামতে চাইতো অনর্থক;


বরফ ডাঙায় ভরাট নদীর কন্ঠ-স্রোতের গাল টেনে হারানো
দিনের গান গেয়ে ভেতরে ভেতরে যতদূর দৃষ্টি যায় নীল খাম,
জড়ানো চিবুক, শৈশব সংসার প্রত্যাখান করে একদিন
হয়েছিলাম স্মৃতি স্বীকৃত পুরোহিত।


বরফ-কাঠে একটুও না নড়ে কিছুক্ষণ
--------------------------------
মনে পড়ে লাজুক চন্দ্রবিন্দু চুষে চুষে খেয়েছিলাম
অপ্রাপ্তবয়স্ক চুমু -- তারপর ক্ষত কার্তুজে একটু
আধটু বিপ্লব নেমে দাঁতে দাঁত চেপে ঠিক চুমুর
নিচেই ভেঙ্গেছিল অসংখ্য প্রাপ্তবয়স্ক প্রেমের গুপ্ত পাঠ;


একদিন ভুলভাল পতঙ্গ উড়িয়ে চেয়েছিলাম
অন্তরঙ্গ পৃথিবীটা একটু মাথা নেড়ে চুপ থাক-
শুধু ঋদ্ধ ঠোঁট আর বুক নড়ে মাঝখানে
নেমে যাক শেষকৃত্যের জল;


মনে পড়ে প্রথম প্রেমের পর নড়বড়ে পাতার
উপর দাঁড়িয়ে নির্ভয়ে পড়েছিলাম বোবা
গাছের ভবিষ্যত আমাদের প্রয়োজন ।


মহাপুরুষ
----------
প্লাস্টিক সার্জারির পর ইলিশের চোখে আর ঘুম নেই,
জলদেবীর ক্যামেরায় কয়েকটি নিরাকার পিরামিড
ধরা পড়ে বাউল ডিমে পুরো ভুবনটাই যেন আজ ফুটেছে -
অন্ধত্ব বরণ করে একটা জাগ্রত অর্জুন গাছ হাঁটু
ভেঙ্গে মাথার উপর বহুদিন হলো নিরব;


শহরতলির গন্তব্য ফেলে নিজের কাছে ফিরে ফিরে
যে হরিণ শেষ রাতে জোস্নার গহীন বুকের খাঁচা
ভেঙ্গে চেটে তা দেয় কবিতার পাঠ - নিমন্ত্রণ;


কোনো কোনো মানুষের সমকালীন মায়া মমতা
পুরনো প্রাচীর উড়ালমন্ত্র সঙ্গম এমনকি বাম হাতের
ব্যর্থতাও হয় দু ফোঁটা বহমান বুড়ো পৃথিবীর হিমালয়-
তাদের জন্যে আমার ঘরে ফেরার গানের নমস্কার।