আকাশ বাতাসে ধ্বনি' ওঠে যেন কাদের ফিসফিসানি,
নক্ষত্রের পতনে সহসা কাঁপিল বিশ্ব-ভূমি!
কুফরের ধ্বজা ভেঙে পড়ে রয় আঁধার এ পৃথিবীতে,
কোরানের পাখি উড়িয়া চলিছে আল্লার সাক্ষাতে –
আরশের পানে! - বীর-সম দলে' কারাগার-শৃঙ্খল,
হুঙ্কারে যার জালিমের গদি কাঁপিত রে টলমল!
সাত আকাশের ফেরেশতা সব প্রথম আকাশে এসে –
অভিনন্দন-মালা দিয়া গলে আগমনী গাহে হেসে!
শোকে স্তব্ধ মর্ত্যবাসীর শোকানলে পোড়ে প্রাণ,
ঊর্ধ্বে গাহিছে আসমানবাসী – “আহলান! সাহলান!”


ছিল সে কোরান, তোমার হাতে – যেন আলীর জুলফিকার,
পদধ্বনি শুনি' বেহুঁশ হত কেঁপে শয়তান – থরথর!
সাম্য-শান্তি আনিতে ধরায় ছড়িয়ে  কোরান-বাণী –
এক আল্লায় জানে শুধু প্রিয়, দিয়াছ কি কোরবানী!
মরণের ঘুমে বেহুঁশ যখন বিশ্বের মুসলিম,
আঁধারে আজান হাঁকিয়া জাগালে যুগের মুয়াজ্জিন!
অসম সাহস ওমরের তুমি, তেজ তুমি হামজার –
মুহাম্মদ কাসিমের ঢাল ও খালিদের তরবার!
মোরা হীনবল! সারমেয় সম চাটি জালিমের পদ,
তোমারি মতন কাঁপাতে পারি না জালিমের মসনদ!
লাজহীন পশু! – মুখ বুঁজে সই জালিমের অত্যাচার,
তোমারি মতন হাঁকিতে পারিনে সিংহের হুংকার!
যেই পা দিয়া লাথি মারে – মোরা সে পদে করি সালাম,
মনুষ্যত্বহীন মোরা – জালিমের পদসেবী গোলাম!
আমাদেরি কাঁধে ভর করে তাই জামানার অভিশাপ,
কোটিবার ঘুরে এলেও দোযখ – মাফ হবে না এ পাপ!
ওগো ইসলামী জগতের রবি! জ্বলিতে ঊর্ধ্বাকাশে,
ছুঁড়িয়াছে যারা কাদা তব পানে – পড়ে আজ মুখে এসে!
চলে গেলে পাখি, তবু সে জালিম তোমারেই পায় ভয়,
এ ভয় তাদের সত্যের প্রতি, শুধু তোমারেই নয়।
জানাজা পড়িতে দিল না ক, পাছে মরণ-ঘণ্টা বাজে,
মোরা জানাজার নামাজ পড়েছি হৃদয়-জায়নামাজে!


শত জুলুমেও নত নাহি হয় যার উদ্ধত-শির! –
সর্বযুগের মহামানব,  সে চির-বিপ্লবী বীর!


কে দেবে আঘাত, ঘুমন্ত শত বদ্ধ হৃদয়-দ্বারে?
কে দেবে আঘাত,  গোমরাহী হৃদে – তালা ভাঙিবার তরে?
সত্য-মশাল কে আসিবে ধরে কুফরের অন্ধকারে?
কে কাঁপাবে আর জালিমের গদি, শের-সম হুঙ্কারে?
পথহারা শত মুসাফির আঁধারে কিভাবে পাইবে আলো?
কোরানের পাখি! ফিরে পুন: হৃদে কোরানের আলো জ্বালো!
ফিরে এসো বীর! এসো এ যুগের সত্যের সেনাপতি,
তোমারি হুকুম চাহে বাংলার বীর মুসলিম জাতি!
রক্তচক্ষু জালিমের দেখি, ভয় করনি হে বীর,
অত্যাচারীর খড়্গ তোমার চরণে নোয়ায় শির!
পার্থিব শত প্রলোভন, খ্যাতি, ঐশ্বর্য-মায়ায় –
রাজার তখত, অর্থবিত্ত – কদমে সালাম জানায়!
যত অপবাদ দিক রে বন্ধু! – বিশ্ব তোমায় জানে,
মুকুটবিহীন সম্রাট, - কোটি হৃদয়-সিংহাসনে!
গর্ত হইতে ধূর্ত শিয়াল বেরিয়ে দিতেছে ডাক,
হুঙ্কারে কে বা কাঁপাবে জমিন? দেবে হায়দরি হাঁক?
জুলুম দেখিয়া বজ্রকণ্ঠে কে বা দেবে হুঙ্কার?
সিংহ-পুরুষ চির-নিদ্রায়, জাগিবে না কভু আর!
দুনিয়াবী জিন্দেগী, ওতো মুমিনের তরে কারাগার,
দৈত্যের কারা ভেঙে চলে গেলে হে মহান রাহাবর! –
খোদার দীদার পেতে, - বেহেশতে উড়িতেছ বুলবুলি,
পৌঁছাতে সেথা পারে না জুলুম, জালিমের ফাঁসি-গুলি!
ফুৎকারে ওরা নিভাইবে নাকি খোদার দ্বীনের বাতি?
জানেনা – খোদায় নিজে নূর জ্বেলে ঘুচান তিমির রাতি!
যত লাঞ্ছনা-অপবাদ-তীর ছুঁড়েছে তোমার গায়ে,
ফুল হয়ে সব ফুটিয়া উঠিয়া ঝরেছে তোমার পায়ে!


পাপ-কলঙ্কে ভরা এ পৃথিবী ভাল লাগে না ক' তাই –
মিনতি করিলে – “দাও গো বিদায়! প্রভুর নিকটে যাই!”
খোঁজ পেলে বুঝি আল্লার অমৃত-প্রেম-ভাণ্ডার!
মানুষের এই ভঙ্গুর প্রেম ভাল লাগে নাকি আর?
তাই তো বন্ধু! কোরানের পাখি! ঊর্ধ্বে পক্ষ মেলি –
উড়ে চলে গেলে মাটির দেশের ভালবাসা অবহেলি!
পদ-শৃঙ্খল ভাঙিয়া, ভাঙিয়া জালিমের কারাগার –
উড়িলে সেনানী আরশের পানে – মোলাকাতে আল্লার!
বেহেশত হতে ফেরেশতা সব পুষ্পবৃষ্টি করে,
কহে – “কারা ভেঙে কোরানের পাখি আসিল মোদের ক্রোড়ে!”
ফিরদৌসের মেহমান-রূপে তুলে নিল আল্লাই,
আকাশে বাতাসে ক্রন্দন ওঠে – “নাই গো, সে আর নাই!”
থমকে গিয়াছে এ মহাবিশ্ব, চন্দ্র, সূর্য, তারা,
আকাশ ভাঙিয়া ঝরিছে বৃষ্টি, যেন তার আঁখিধারা!


হয়ত ভালই করেছ, ভেঙেছ এ দুনিয়া-কারাগার,
সত্য যেখানে যায় না ক' বলা – স্থান নহে তোমার!
জীবন ভরিয়া খোদার কাজের দিয়া গেলে আঞ্জাম,
শহিদী মৃত্যু দিয়া বুঝি খোদা দিল তার প্রতিদান!
তোমারি স্মৃতিরে ঘিরে হেথা জমে কত নয়নের জল,
বেদনা-সাগর মাঝে শতদল করিতেছ টলমল!
নিখিল বিশ্ব ছাপিয়ে উঠেছে শোক-তাপ-হাহাকার,
দুখ পেয়ো না ক', সত্য-সেনানী আসিবে পুনর্বার,
আমাদেরি মাঝে জন্মিবে পুন: কোরানের সেনানী,
এক সে খোদায় বেছে নেবে কা'কে – জেনো এ সত্য-বাণী!


আদর্শ মরে না ক'; আদর্শধারী শুধু চলে যায়,
যুগ যুগ ধরে সেই আদর্শ কোটি হৃদে বাতি জ্বালায়!
প্রদীপ জ্বলিয়া ওঠে জ্বলন্ত প্রদীপের কাছে এলে,
বিপ্লবীদের ছোঁয়ায় তেমনি ঘুমন্ত ওঠে জ্বলে!
বিপ্লবী তাঁর বিপ্লবী তেজ জ্বেলে যায় কোটি প্রাণে,
ওদেরি প্রেরণা পেয়ে সবে জালিমের শিরে আঘাত হানে!
বিপ্লবীদের তরে শহিদেরা বাতিঘর প্রেরণার,
প্রেরণার বলে জালিম-প্রাসাদ কাঁপায় হেঁকে হুঙ্কার!
অত্যাচারীর তখত, ক্ষমতা, দুর্ভেদ্য গড়ে –
এদেরি ঝঞ্ঝা-ঈমান সমুখে তৃণ-সম যায় উড়ে!
সত্য পথের বিপ্লবী যাঁরা, তাদের মৃত্যু নাই,
হাসিতে হাসিতে শহিদ হয়ে লয় খোদার নিকটে ঠাঁই!
হক বাতিলের দ্বন্দ্ব – উহা তো জিন্দেগী মুমিনের,
বাতিলের আঘাতে শহিদ হলে – চির-অতিথি বেহেশতের!