আমি আমার সন্তানদের বলি, ‘‌‌‌লেখাপড়া শিখে তোরা মানুষ হ’
তারা কি বোঝে কে জানে!
তবে তাদের চোখে মুখে ফুটে ওঠে আত্মবিশ্বাস
দেখে আমি পুলকিত হই, মানুষ তারা হবেই হবে
একদিন আমার সন্তান আমাকে আচমকা প্রশ্ন করল


‘মানুষ হওয়া কাকে বলে, বাবা’?
তখন আমার চোখের সামনে কোন মুখ স্পষ্ট হয়ে এলো না
আমি চারপাশে তাকালাম, তারপর আরও দুরে
মহল্লা থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে শহর, শহর থেকে শহর
আমার সন্তানকে দেখানোর মতো কাউকে পেলাম না!
আমার বুক ধকধক করে উঠল, সে যদি আমার মতো হয়!!
না, এরকম হতেই পারে না
আমার সন্তানেরা হবে মানুষ, মস্ত বড় মানুষ!
আমার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে আমার সন্তান আবার প্রশ্ন করল
‘কি ভাবছ বাবা’?
কই কিছু না তো! আমি জবাব দিলাম হাসিমুখে
আমি বললাম, মানুষ হওয়া মানে ক্যারিয়ার গড়া
ভালো করে মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে নে, বুঝলি?
সেই থেকে তারা মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছে
ডাক্তার, ইঞ্জিনয়ার, জজ, ব্যারিষ্টার, বিজনেস, সর্বপোরি মুনাফা গড়া।
আমাদের সন্তানকে আমরা দম দেওয়া পুতুলের মতো ছেড়ে দিয়েছি
লাভের পেছনে ছুটতে ছুটতে তারা একদিন
বন ধ্বংস করবে, পাহাড় ধ্বংস করবে, নদী-নালা ভরাট করে ফেলবে
যুদ্ধ বাধাবে, আমাদেরকে বিকিয়ে দেবে, তাতে কি!
আমরা তাদের আত্মোন্নয়নের কথা কিছু শেখায় না
তাদের হৃদয়টা কোমল করতে, ভেতরের মনুষ্যত্বটা জাগ্রত করতে
মানুষকে ভালবাসতে কেউ বলি না
মানুষের নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে কথা বলতে আমরা কেউ-ই বলি না
সে যেন অনুভব করতে পারে
ঘাসের বুক থেকে শিশিরের ঝরে যাওয়ার বেদনাও
আমরা আমাদের সন্তানদের দিয়েছি অসুখ
গভীর গভীরতর অসুখ, সবকিছু অনাচার দেখে নিলির্প্ত থাকার অসুখ।