কাক ডাকা ভোরে অপুষ্টি আর অর্ধাহারে থাকা
গার্মেন্টস কর্মীরা পিঁপড়ার মত দল বেঁধে
বুকে দুঃসহ যন্ত্রণা চেপে মুখে হাসি ধরে ছুটে চলে
আর স্বপ্ন আঁকে সুদিনের।
কিন্তু হায়! সে দিন তো আর আসে না।


প্রবেশ করে তালা দেয়া ইটের বদ্ধ খাঁচায়,
বিচ্ছিন্ন পৃথিবীতে,আনন্দহীন একঘেয়ে পরিবেশে।
সেদিন তালাবন্ধ কারখানায় আগুন লেগেছিল
জীবন্ত দগ্ধ সকিনা আর শিউলি;
পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে
আরও কয়েকটা রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে সিঁড়ির উপর।


বারে বসে মদের পেয়ালা হাতে নিয়ে
টাকার বান্ডিল ছুঁড়ে মারো তোমরা নর্তকীর গায়ে
অথচ এখানে চাঁদা তুলে
শ্রমিকেরা বাবাকে পাঠাল মেয়ের লাশ
সেই বাবার বুকে কত আশা ছিল, প্রেম ছিল, ভালোবাসা ছিল।
বুক ভেঙ্গে গেল তার! কি নিয়ে ঘর বাঁধবে সে?
মেয়েগুলো এখানে বাঁচতে এসেছিল
অথচ নিষ্ঠুর এই পৃথিবী তাদের বহিষ্কারের আদেশ জানাল
অবশেষে তারা আর্তনাদ নিয়ে
খালি হাতে পৃথিবী থেকে চলে গেল।
জীবনের পাতায় পাতায় সংগ্রাম, শোষণ আর বঞ্চনার
ইতিহাস লিখে গেল।


কাজের চাপে তাদের যন্ত্রণার ইতিহাস মুছে যায়
ওভার টাইমের শৃঙ্খলে ভাগ্য ঝুলতে থাকে
শোকের বদলে পশুপাখির জীবন মেনে নেয়।
এ এক জীবনে তারা আর কত কষ্ট পাবে?
জীবন-আঁধারে আলোর প্রদীপ বুঝি আর জ্বলানো গেল না!


কারখানার নির্মম নিয়মে তারা বিসর্জন দেয়
প্রিয়জনের কাছে থাকার সুখ।
তবুও স্বপ্ন আছে,মাস ফুরলে বেতন পাবে
ছেলেটাকে ডাক্তার দেখাবে, অনেকদিন পর ঈদে বাড়ি যাবে।
এত প্রতীক্ষা!
অথচ খবর এলো বোনাস নেই,বেতন পাবে অর্ধেক।
খবর শুনে বুকে বেদনার পাথরে পাথর ঘষে জ্বলে উঠলো আগুন
চাকরী অনিশ্চিত করে
বেতনের দাবিতে সবাই দলে দলে রাস্তায় নেমে এলো
পুলিশের হুইসিলে বেজে উঠে আবহ সংগীত
মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় বিপ্লবী কণ্ঠস্বর
পুলিশের লাঠি তাদের কোমল শরীরে উল্কি এঁকে দেয়
তাদের ঘাম ঝরা কপালে তাজা রক্ত ঝরে।


তোমরা যারা আছো সুখে দেখেছ কি কখনো?
অভাবের তীব্রতায় বেঁচে থাকার আকুলতা ।
যাদের ঘামের স্রোতে ভেসে গেছে তোমাদের সব কষ্ট
গড়ে উঠেছে তোমাদের বৃহৎ অট্টালিকা।
বিলাসিতা আর লোভের পর্দা দিয়ে ঢেকেছ তোমাদের চোখ
তাই তাদের দেখনি।
কিন্তু বিধাতার খাতায় সব হিসাব জমা আছে
একদিন তার কাছে তোমরা কাঁদবে এই শ্রমিকের মতো
সেই দিন আসিতেছে আরশে বসে হাসছেন বিধাতা।