তাদের কান্নার দাগ মুছে দিতে আকাশ ছেয়েছে কালো মেঘে
তুমুল তোড়ে আগুনের ফুলকির মতো বৃষ্টি নামে
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে মায়ের কোলে শিশু
খোলা আকাশের নিচে ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ে দাঁড়িয়ে ভিজে ভিজে
কঠিন সত্যকে নেয় চিনে; এই মাটিও তাদের নয়।


মৃত্যু উপত্যকা ছেড়ে তারা এসেছে এখানে জীবনের খোঁজে
হরিণের মাংসের গন্ধে ওঁৎপেতে বিপদ আসে
সম্পদের আকর্ষণে ডাকাত দস্যু দুর দূরান্ত থেকে আসে
দুর্বল মানুষ দেখে ধূর্তরা চালাক শেয়ালের মত সুযোগ খোঁজে
নেতাহীন জন-অরণ্যের দখল নিতে
বাঘ সিংহ হায়েনা একসাথে আসে; কাকে ফিরিয়ে দেবে!


একসময় আরাকান রাজসভা ছিল বাংলা সাহিত্যের চর্চাকেন্দ্র
এখন সেখানে নৈরাজ্য, তারা হারিয়েছে নাগরিক অধিকার
তারা নিষ্ঠুর শাসকের করুণা নিয়ে বেঁচে থাকে
শাসকের চোখে কেবল রহিঙ্গাদের সম্পদের চমক ওঠে
মাটির নিচে, পাহাড়ে, সমুদ্রে সম্পদে ঝলসানো স্বার্থের বিষ
বিদেশি বেনিয়াদের খুশি করে ক্ষমতার মসনদ টিকাতে হবে
ক্ষমতার চিরযৌবন রূপের মোহে মানুষের জীবন কিছু নয়!


স্বার্থের বারুদের বিস্ফোরণে জ্বলছে জনপদ
পুড়ছে বাড়িঘর, পুড়ছে আটকে পড়া মানুষ, গৃহপালিত পশু
পলায়নরত মানুষের দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে বুলেট
জীপ গাড়িতে আসে সৈন্য, খোলা তলোয়ার হাতে পার্টির ছেলেরা
তবুও রাতের আঁধার নামে, তারা অশ্রু মুছে ফেলে।
পাহাড়ে অরণ্যে লুকিয়ে টহলরত প্রহরীদের চোখ এড়িয়ে
অনাহারে অর্ধাহারে মাইলের পর মাইল কাঁদা পানি জঙ্গল ভেঙে
বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে তারা উখিয়ায় এসেছে।


পরিবারের নয় জন লাশের মধ্যে লাশ হয়ে থেকে
একজন অবশেষে পৌঁছেছে এখানে
চোখের সামনে পিতা, ভাই, স্বামীর মুণ্ড বিচ্ছিন্ন হতে দেখে
কোলের শিশুটাকে বুকে আগলে ধরে কেঁদেছে নারী
সভ্রমের বিনিময়ে জীবন ভিক্ষা পেয়ে নারীও এখানে এসেছে!
এক লোক পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছিল হায়েনাদের হাতে
তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল তারা
আগুনে পোড়া ক্ষত নিয়ে সেও এখানে এসেছে!
যুবক ছেলেদের কাঁধে চড়ে বৃদ্ধরাও এখানে এসেছে
এখানে হাজারে হাজারে প্রতিটি মানুষেরই এরকম এক একটা গল্প আছে
আসার সময় তারা দেখেছে পথের ধারে
স্বজনদের লাশ নিয়ে শকুন আর শেয়ালের টানাটানি
তীব্র গন্ধের মৃত গলিত শবদেহকে পাশ কাটিয়ে হেঁটে এসেছে
মৃত সন্তানকে বুকে ধরে বাঁচার আশায় হেঁটে এসেছে
ডোবার ভেতর কচুরিপানার জঙ্গল ঠেলে বেরিয়ে পড়ে মুণ্ডহীন ধড়
নাফ নদীর তীরে পানার মতো ভেসে যায় স্বজনের লাশ
এই সব পেরিয়ে উখিয়ায় এসেছে  তারা আশ্রয়ের খোঁজে।


এইটুকুন এক জায়গা কে দেবে তাদের! কি খাবে তারা!
কোন উত্তর নেই! তবুও এসেছে।
তবুও এখানে তারা পায় লাশের গন্ধমুক্ত বিশুদ্ধ বাতাসের খোঁজ
তারা ফেলে এসেছে মৃত্যু উপত্যকা, আজো সেখানে চলছে নিষ্ঠুর খেলা
তাদের কান্নার দাগ মুছে দিতে
তুমুল তোড়ে আগুনের ফুলকির মতো বৃষ্টি নামে
মায়ের কোলে শিশু; পেটে ক্ষুধার যন্ত্রণা; মাথার উপর খোলা আকাশ
তাদেরও দু’চোখ ভোরে বৃষ্টির মতো স্বপ্ন নামে
বেঁচে থাকার, ভালো থাকার।