কি হলো! তাকিয়ে আছো কেনো?
কিছু বলবে?
মেঘলার অপলক চাহনির অতৃপ্ততায় জমে আছে একরাশ হতাশা।
যে কেউ ভাববে সে ক্ষুধার্ত! না তা নয়!
তার আঁখি যুগলে ঝড়ছে নায়াগ্রার জলপ্রপাত।

আজ ছয় বছর পর মেঘলার সাথে দেখা আমার,
অপরিবর্তিত আবেগ তার, তবে সেই দাম্ভিকতা আর
অহমিকার ঘাটতি ছিলো অবয়বপুর্ন।
আমার চোখের দিকে তাকিয়েই আছে নিরবচ্ছিন্ন মায়ায়।

ভাবছিলাম সে রোগাক্রান্ত, হয়ত অসুস্থ,  দীর্ঘদিন চিকিৎসা হয়নি তার।
খুব মায়া হচ্ছে তার লাবন্য ছড়ানো মায়াবী চাহনিতে।
কিসের এত মায়া আমার? সেই পুরোনো আবেগে ডুব দিলাম,
কল্পনায় ভেসে গেলাম স্মৃতি রোমন্থনে,
তার মাঝে নতুন করে হাড়িয়ে ফেললাম নিজেকে।

৪ বছর সংসার জীবনের ইতি টেনে বিচ্ছেদের মালা পড়ে
মেঘলা ছেড়ে গিয়েছিলো সুখের শুভ্র ভিটে।
সমুদ্রের উন্মাতাল ঢেউয়ের মত একটা জোয়ার এসেছিলো,
মেঘলা ছিলো সেই জোয়ারের পানি।
ভাটার মত করেই একসময়  মেঘলাও
চলে গিয়েছিলো আমার জীবন থেকে।।  

হঠাৎই শুন্য হয়ে পড়েছিলাম,
বিমর্ষচিত্তে যাতনায় বিদীর্ণ আমার অতলান্ত হৃদয়,
একটা অনুভবের উষ্ণ অনুভূতির  হাহাকারে
বিভীষিকাময় কাটছিলো বিনিদ্র রজনী।

মেঘলা সৎ-অসতের তোয়াক্কা করতোনা।
মেঘলা ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝতে চেস্টা করতোনা।
মেঘলা ভালোবাসা-প্রতারনার অর্থ খুজতোনা।
মেঘলা নিয়ম-অনিয়মের অংক উপেক্ষা করতো।

আজ মেঘলার জন্মদিন।
পুরনো সেই তেঁতুল গাছের নিচে
একজন পুরনো প্রেমিক অপেক্ষায় থাকে মেঘলার।
গত হওয়া শেষ কয়েকটি বছর মেঘলা এসেছিলো
নীল পাড়া শাড়ি পড়ে। খোপায় ছিলো আমার পছন্দের শুভ্র বেলি ফুল।
অপূর্ব এবং পরিচ্ছন্ন আভাময় সবুজ প্রকৃতির
লালিত কন্যা মনে হত তাকে।

একটা শৃঙ্খলা ছিলো,
একটা আবেগি বিকেল ছিলো আমাদের।
আমাদের দুজনের একজন বন্ধু ছিলো,
তার নাম 'ভয়'।
আমরা দুজনেই ভাবতাম কেউ যদি একে অন্যজন কে ছেড়ে যাই,
যদি কেউ হাড়িয়ে যাই।
নীল আকাশে মিলিয়ে যাই!
এই ভয় ছিলো আমাদের ষষ্ঠ  ইন্দ্রিয় জুড়ে।

সম্পর্কের দেয়ালে ফাটল ধরলো,
অবিশ্বাস আর অবহেলা নয়,
মানসিক যন্ত্রণার পাশবিকতায় দাহন হতে থাকলাম।
কেউ একজন পেছন থেকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছিলো  
আমার আর মেঘলার সম্পর্কের ড্রয়ারে।

হঠাৎ মেঘলা বদলে গেলো,
নিজেকে আবিষ্কার করলো একজন অভাবি নারী সে,
সে নাকি অভাগীনি, সে সুখে নেই,
তার অভিযোগ, অনুযোগে ধিকৃত আমি।
তার ইচ্ছে অনিচ্ছের কোনো মুল্য নেই আমার কাছে !
তার অনেক টাকার প্রয়োজন দেখা দিলো,
আমার অভাবের সংসারে সে অতিষ্ঠ।

বিত্ত-বৈভব আর আভিজাত্যের উষ্ণতা
মেঘলাকে করেছে মোহাচ্ছন্ন,
বেমাতাল জীবনের ছন্দ হাড়ানো
কবিতার স্রষ্টারাও হাড়াতো মখমল পান্ডুলিপি।
একটা অস্পৃশ্য প্রেতাত্মা মেঘলাকে খুবলে খেত
নিদ্রাহীন তন্দ্রাচ্ছন্ন গহব্বরে।

আমিতো আগলে রেখেছিলাম ভালোবাসায়!
আবেগে, স্নেহে, কাব্যে আর গল্পে!
এসবে তার মন ভরেনি।  
সে অপুর্নতা আর অতৃপ্তির বিষাদে
আমাকে ছুড়ে ফেলে চলে গিয়েছিলো।

সময় মানুষকে মানুষ চেনাতে সাহায্য করে,
সময়  হয়ত মানুষ চিনিয়েছে মেঘলাকেও,
অভাবের করিডোর যার আপন ঠিকানা
সে কি করে বিশ্ব প্রেমিক হতে পারে??

শর্ত সাপেক্ষে লেন-দেন হয় ঠিকই কিন্ত
অর্থ-বিত্তইতো আর প্রেমের মানদণ্ড নয়,
কখন কে শিরি-ফরহাদ আর লাইলি মজনু হবে,
তা কি কারো কপালে খোদাই করা থাকে??
এক নারীতেই ভ্রষ্ট পুরুষের অন্য কাউকে
আপন ভাব্বার আর দু:সাহস হলোনা!
তাই বলে এখন আমিও কি নির্মমতার
নির্মম পরিহাসের অপরিহার্য অবশিষ্টাংশ?

রঙিন স্বপ্নে বিভোর হওয়া মেঘলারা
সুখের পৃষ্ঠ খনন করে আর তাতে রোপণ করে অহংকার,
দম্ভ আর অবহেলার বীজ।  
মেঘলারা চলে যায়,
মেঘলারা হাড়িয়ে যায়।
থেকে যায় তাদের বেহিসেবি পরিত্যক্ত লজ্জাহীন অভয়াশ্রম,
৩ বছরে দুধ মুখো শিশুটির জীবন্ত মা হাড়া  
বেদনায় কেঁপে উঠেছিল সেদিনের আকাশ,
হয়ত কাপেনি মেঘলার অন্তর !

রচনা কালঃ  রাত ১১.৩০ মিনিট
২০শে ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার ২০২৪ খৃষ্টাব্দ
গাজীপুর , বাংলাদেশ থেকে
© Copyright সংরক্ষিত ®