বাস চলছে...
মহাসড়কে,কালো রাস্তায়, কুয়াশা ভেদ করে
নীরবে নিশ্চুপে তীব্রগতিতে চলছে নিরুপমা এক্সপ্রেস
আমি আর সে-ড্রাইবার।যাত্রী নেই।ক্লোজ্ড ডোর।
সূর্যের আলো বিস্ফোরিত হচ্ছে মেঘের আড়াল হতে
কুয়াশা সাদা শাড়ি গুটিয়ে পালাতে ব্যস্ত।


সে আমায় বললো;আচ্ছা!তোমার এখন কাকে মনে পড়ছে? এই যেমন; রবিদা,নজরুল,সুকান্ত শেলী,কীটস কিংবা জিবরান?


না।কেও জিতেনি তোমার সাথে।তোমার প্রথম কথা,প্রথম ভুল,প্রথম রাত জাগা,প্রথম চোখ বন্ধ করে নিজকে সঁপে দেওয়া কাব্যের ময়দান দখল করেছে।


আচ্ছা ইবু! আমরা আর কত সূর্যদোয় পাড়ি দেবো? আমাদের বাস কি দিগন্ত ছুঁবে না?কিন্তু দিগন্ত যে আমাদের সাথে তাল মিলিয়ে ধাবিত হচ্ছে!


দিগন্ত ছোঁয়ার খুব শখ বুঝি!
এই যে সমুদ্র।কত বিশাল জলরাশি!ছোট ছোট ঢেউ।বড় বড় ঢেউ।ঢেউয়ের উপর আছড়ে পড়ছে ঢেউ।আচ্ছা নেবু, মনে কি হয়?এই ঢেউ খেলা কখনো থামবে।বিশাল এই জলরাশি শুকিয়ে যাবে।তবে কেন এই যাত্রা থামবে?


থামো!থামো!
ট্রেন আসছে।না থামলে পিশিয়ে দেবে বাস।নেবুর আতঙ্কিত চিৎকার।
কিন্তু নিরুপমা এক্সপ্রেস থামেনা।গতি আরো বাড়ে।আরো বাড়ে।
অল্প হলেই ধাক্ষা লাগতো বাসে।নেবু তখন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।


বাস চলছে...
কখনো আমি কখনো চালায় সে।
পৃথিবী ঘুরছে পশ্চিম থেকে পূর্বে।আমরা বলি বেলাশেষ বেলাশুরু।নিরুপমা চলে অবিরাম।


একরাতের কথা।
আমাদের সাথে চলছে চাঁদ,আকাশ ভরা তারা...
জ্যোৎস্নার বানে প্লাবিত পৃথিবী।স্নান করছে তরু,স্নান করছে উদগ্রীব দেবদারু আর আমাদের নিরুপমা।
হঠাৎ সাইরেন বাজিয়ে যেন আগুনের ফুলকিতে পুড়ে ভেঙ্গে পড়ছিলো আকাশ।প্রচন্ড হাওয়া ছুটে চলছে উন্মাদনায়।ফেটে যাচ্ছে পিচ ডালা কলো রাস্তা,ভেঙ্গে পড়ছে গাছ।
সে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল;থেমো না ইবু।বিশ্বাস রেখো।আমরা ফিরে পাবো আমাদের আকাশ।


এখনো চলছে নিরুপমা এক্সপ্রেস।
আজ চার বছর।চার বসন্ত পাড় করে আজ এখানে।


অবাক হচ্ছেন?
জ্বালানীর জন্যও  থামিনি বলে।হা হা হা!


শুনুন তাহলে!
সৌরচালিত আমাদের নিরুপমা।নিরুপমা এক্সপ্রেস।