প্রিয় আম্মা


     আজকের এই শীত সকালে তোমায় খুব মনে পড়ছে আম্মা। সে কবেকার কথা তবু যেন মনে হয় , চোখের সামনে এখনো সব বায়স্কোপের মতন ঘটে যাচ্ছে। সেদিনের সেই সাদা কালো দিনের পুনরাবৃত্তি।
     আমাদের জন্য তোমার ছিল সব সময়ের তাড়াহুড়ো । উঠানে আখার আগুনে মাটির হাঁড়িতে ফুটছে নতুন চালের ভাত। সুন্দর গন্ধ ভাসছে আমার চোখে বিস্ময় । কোন সকালে ঘুম থেকে উঠে সারা উঠান পরিস্কার করে গোবর দিয়ে লেপেছ ছবির মতন সুন্দর করে । আমরা সব নাতি নাতনি আম্মা আর জলন্ত আখাকে ঘিরে বসে পড়লাম আসন করে। পিঠে এসে পড়ছে সকালের সোনালী রোদ্দুর। আমি তন্ময় হয়ে দেখছি মাদার গাছের ফুল থেকে একটা পাখী মধু খাচ্ছে।  আমরা বড়দা ঝাঁকিয়ে দিয়ে বলল - এই হাঁদা গরম গরম খেয়ে নে দেখবি অমৃত লাগবে। এই কথা শুনে ওরা সবাই হেসে উঠল। আমি কেমন বোকা হয়ে গেলাম। খাবার দেখে বললাম এটা কি? দিদি বলে উঠলো- ওটা লাল চালের ভাত আর ওটা বেগুনপোড়া।বোকার হদ্দ কিচ্ছু জানেনা; সবাই আবার হেসে উঠল।  ওর যে কেন আমাকে এইরকমের নাম দিয়ে ডাকে জানিনা। আমার যে সবেতেই ভীষণ কৌতূহল! জানতে ইচ্ছা করে। আম্মা কিন্তু একটু ও হাসলনা, বরং আমার মাথায় হাত বুলিয়ে সবাইকে একপ্রস্থ ধমক দেয় - আমার মুকুল সোনাকে কেউ কিচ্ছু বলবেনা। ও যে সবার থেকে ছোট।  আজ আমি ওকে নিজের হাতে খাইয়ে দেব। এত গরম আমার সোনা খাবে কেমন করে?


           এখনো মনে আছে ভুলিনি আম্মা সেদিনের সেই মোহনভোগ । গরম ভাত আর বেগুনপোড়া। তাইতো আজো তোমাকে স্মরন করি । ভাবলেই বুকের ভিতর গলার কাছে কেমন দলা পাকানো ঢেউ জাগে বুঝতে পারি। যেখানে থেকো ভালো থেকো।


তোমার মুকুল