ওর নাম হাসি
মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকে।
নাম একটা ওর ছিল বটে,
তবে ওটা সবাই ভুলে গেছে।
সেটা হাসির মুখের হাসির কারণে।
একদিন ওর মা বললে শরীরটা ভালো নেই, আজ তুই ইটভাটায় যা।
আমার হয়ে আজ কাজ তুই করবি।
ম্যানেজার বাবুকে বলতেই এক কথায় রাজি হয়ে গেল।
হাসির শরীরের দিকে চেয়ে বাবু বলে তুই পারবি?
সে কাঁধ উঁচু করে বলল খুব পারবো বাবু ।
তোর মা কিন্তু দুহাজার ইট বয়ে দিত।
দেখ কতটা পারিস, সন্ধ্যের সময় দেখা করিস।
অন্যদের দেখে হাসি শিখে নেয় খিদে মেটানোর মন্ত্র।
মাথার পাটাতনে দুটো করে ছটা ইট সে বয়ে নিয়ে যায়।
এইখান থেকে ওইখানে দূরে আগুন ভাটির কাছে।
অনেকেই আটটা দশটা করে পারে।
হাসি বহুবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।
ওর কোমরটা মাঝে মাঝে বেঁকে যাচ্ছে।
মুখে কিন্তু সব সময় ওর খুব হাসি।


কেউ কেউ বলছে, তোর কষ্ট হচ্ছেনা রে।
আজ প্রথম দিন শরীরে খুব ব্যথা হবে।
ও বলল না'তো... তারপর সেই বিখ্যাত হাসি।
উত্তরে হাসি বলে আমার হাসি দেখে বুঝতে পারছ না!
ম্যানেজার বাবু ভাটির কাছে বসে হিসাব লিখছে।
নবাগতা হাসিকে দেখলেই কেমন অদ্ভুত ভাবে বাবু হাসছে।
ততবার হাসি নিজের হাসি বাবুর কাছে ফিরিয়ে দেয়।


সূর্য ডুবল পশ্চিম দিকে।
সন্ধ্যাবেলায় ও পয়সা চাইতে গেল।
সবাইকে পয়সা দেওয়ার পর ওর ডাক পড়ে শেষে।
বাবু বলে -তোর মা অনেক টাকা ধার করেছে রে।
আজ তোর মজুরি হবেনারে হাসি।
তুই বরং কাল আসিস।
রুখে দাঁড়ায় হাসি কেন বাবু?
আমায় আজকেই মজুরি দিতে হবে।
ক্রুর হাসিতে বাবু বলে -তবে ঘরের ভিতরে আয়।


ঘরের ভিতর থেকে যখন হাসি ফিরে আসে বাইরে।
ওর হাতে টাকা আর চোখে ভরা জল।
কে যেন ওর মুখ থেকে সব হাসিটুকু শুষে নিয়েছে।