প্রায় তিরিশ বছর পর তোকে দেখলাম। এমারজন্সিতে বয়স্ক একজন পুরুষকে সাথে করে। আমার তখন ডিউটি শেষ চলে যাব। তবু আড়াল থেকে সবটা দেখলাম আর আমার পরিচিত নার্সকে বলে দিলাম দেখিস যেন সঠিক যত্ন নিয়ে দেখাশোনা করা হয়। আমার অতি আপনজন।
        
        আমার পরিচিত নার্স ছোট্ট হেসে বলল- এই কি তোমার সেই কিশোরীবালা ? মুখ থেকে বেড়িয়ে গেল হ্যাঁ সেই আমার প্রথম ভালবাসা বুড়ি। আদুরী মুখের ধনুক ঠোঁটে আমার সেই কিশোরী বেলার খেলার সাথী। জানো, অপুদা বয়স্ক লোকটা উনার স্বামী। হাত ভেঙেছে পয়সার কথা শুনে ফিরে যাচ্ছিল। তোমার কথায় আবার ট্রিটমেন্ট শুরু হয়েছে। অনেক উনার জিজ্ঞাসা!

         অপুর মনে পড়ে বুড়ি কাঁদছে আব্দার ওর পুতুল বরের হাত ভেঙে গেছে জুড়ে দিতে হবে। অনেক করে বললাম নতুন একটা কিনে দেব। সেটা হবেনা । ওর পুতুল বউ মেনে নেবে কি করে? তুমিতো ডাক্তার হবে, আমার হাত ভেঙে গেলে তুমি কি আমাকে ফেলে দেবে? মেনে নিলাম আমার ভুল। জুড়ে দিলাম বিজ্ঞানের নব অবদানে। প্রশ্নটা কাঁটার মতো বিঁধে গেল হৃদয়ে। তারপর থেকে ওর যাবতীয় কথা আমার না শুনলে মনে হত, দিনটা কেমন নিরস লাগত।
      
       একদিন গভীর রাতে পড়ার ঘরে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে নখ খুঁটতে লাগল। বললাম কিরে মন খারাপ ? পুতুলের সংসার ঠিকঠাক চলছে? কিচ্ছু বলেনা দেখে পড়া ছেড়ে নজর দিলাম। কি ব্যপার বুড়ি জবাব দিচ্ছিস না যে? চোখে চোখ পড়তে দেখি পদ্মপাতার মত চোখদুটো জলেডোবা ।  মনে হোল একটা উত্তর খুঁজছে।  কি হয়েছে ? বলবি? হাতটা ধরতেই দুফোঁটা চোখের জল হাতের উপর পড়লো। বলে ফেলল - আমায় তোমার কাছে রেখে দেবে অপুদা। ছোট্ট কথার ভিড়ে অনেক প্রশ্ন এসে গেল। সময় চলে যায় টিকটিক করে। ছুটে বেড়িয়ে গেল বুড়ি আর ফিরে কোনদিনও আসেনি।
  
       শুনেছিলাম দেশের বাড়ি গিয়েছিল পরিবারের সাথে। তারপর যা হয় বিয়ে করে দিল্লী পাড়ি। আজ দেখা হোল অথচ কোন কথা হলনা। দেখা হলে নিশ্চয় বলত - অপুদা আমার বরের হাত ভেঙে গেছে, জুড়ে দেবেনা? জুড়ে দিয়েছি বুড়ি ... তবে তোর সামনে যাবার সাহস আমার ছিলনা। শুনেছি তুই আমার খোঁজ করেছিস আমি তোর সেই অপুদা কিনা?  দূর থেকেই দেখেছি ভালো থাকিস।