ফুলমালা দিয়ে যাওয়া ছেলেটার নাম ভুলে গেছি। আজ জন্মাষ্টমী বিশেষ দিন ওর ফুলমালা দেবার কথা ছিল। আগের সপ্তাহে ও বলেছিল আমি যেন গিয়ে ফুলমালা সব নিয়ে আসি। সেকথা বেমালুম ভুলে গিয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করছি। আরও বলেছিলাম জুঁই বা রজনীর মালা যেন অবশ্যই থাকে। ঠাকুরঘর থেকে বারবার ধ্বনির তীক্ষ্ণ তীর ছুটে আসছে। -কই সে কি এলো? কখন পূজা হবে ইষ্ট দেবতার?  সবাইতো ভালো করে জানে বেশিক্ষন উপোষ করে থাকতে পারিনা। পায়চারী করতে করতে সব শুনছি আর সেই মালাকারের মুণ্ডপাত করছি। ঠিক তখুনি বেল বাজল দরজা খুলে দেখি উকিলবাবু।  হাতে তাঁর ফুলমালার প্যকেট দেখে আশ্বস্ত হলুম। উষ্ণ অভ্যর্থনা সমেত একটা ধন্যবাদ আর হাসি ছুঁড়ে দিলাম হালকা করে। দরজা বন্ধ করতেই আবার শুরু হোল শব্দ-যুদ্ধ একটা সুতীক্ষ্ণ তীর কর্ণ ভেদ করে দিল। শ্রবণশক্তি সবটুকু নিমেষে হারিয়ে গেল।
        কিছুক্ষনের জন্য চক্ষু কর্ণের বিবাদ শুরু হয়ে গেল। চোখ যা দেখে কান আর কিছু শুনতে পারেনা। তাই ঘটে চলেছে যে ঘটনা সম্মুখে, ঠিক বোধগম্য হচ্ছিল না। যখন বুঝলাম তখন আমি এক গলা ঠাণ্ডা জলে। - একী জুঁই রজনীর মালা নেই কেন? শুধু এই ফুলে কি পূজা হয়! যেখান থেকে পারবে মালা এনে দিতে হবে কৃষ্ণ রাধার আর লক্ষ্মীর। আমি ততোধিক মোলায়েম সুরে বললাম -মালাকার অনেক ফুল দিয়েছে মালা গেঁথে নাওনা। আমার মা কিন্তু নিজ হাতে মালা বানিয়ে নিত... কথা শেষ হলনা তৎক্ষণাৎ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল শ্রীমতীর চক্ষুর অনন্য ব্রম্ভাস্ত্রে । আমি স্তব্ধ বুঝে নিলাম আমায় কি করতে হবে...
        বাগানের যত টগর ছিল সব নিমেষে উধাও । ওরাই ধীরে ধীরে আমার মায়ের শেখানো যাদু মন্ত্রে হয়ে উঠল একটা একটা পূজার মালা । তিনি সব  আড় চোখে দেখে শুনে শান্ত নদীর মতন বললেন -বাহ খুব ভালো হয়েছেতো। এই কথা শুনে আমার শরীর কেমন সুশীতল হাওয়ায় রোমাঞ্চিত হয়ে গেল। মাকে মনে পড়ল মনে মনে চিৎকার করলাম- মাগো মা আমি পেরেছি । এ যেন সেই যুদ্ধ জয়ে পাওয়া সেই বিজয় মাল্যখানি। ভাগ্যিস তুমি বলেছিলে – ‘’খোকা শিখে রাখ, ভবিষ্যতে দরকার হতেই পারে।  আমি একান্তই চাই তুই যেন সব যুদ্ধ অনায়াসে জিতে ফিরিস।‘’  ভাগ্যিস শিখেছিলুম তাই এ যুদ্ধ যাত্রায় খুব জোর জিতে গেলুম। মা তোমার  নাম রাখা সার্থক হোল  ।
তোমার আদরের   -সমরজিৎ