প্রিয় ডাক্তারবাবু -
আপনার সাথে দীর্ঘ পথ অতিক্রমের পর আমি নিজেকে একটু একটু নিজেকে ডাক্তার মনে করি। জনসমক্ষে কেউ জানেনা হয়তো কোনদিন জানবে, আমার তখন বিশাল নামডাক হবে বা জেলহাজত ও হতে পারে। কারণ ডাক্তারি বিদ্যায় পারদর্শী না হয়ে রোগীর চিকিৎসা করাটা অন্যায়। তবু ও করি, না করে থাকতে পারিনা। এই পৃথিবীকে যে খুব ভালবাসি। তাই মোটামুটি এই সেবামূলক কাজটা  নিভৃতে ঘরের ভিতর সীমাবদ্ধ রেখেছি। আপনাকে অবগত করাচ্ছি বলে দয়া করে যেন পাঁচকান করবেন না এতে আমার বিড়ম্বনা বাড়বে।  বিনা ভিজিটেই ওদের সেবা করি। ওষুধ আমিই দিই আমিই নার্স আমিই আবার কম্পাউণ্ডর।  
        ডাক্তারবাবু, আপনি যেভাবে শরীর পর্যবেক্ষণ করে যে নীতি নির্ধারণ করেন কি ওষুধ লাগবে। কিম্বা নতুন নতুন আর কি কি টেস্ট প্রয়োজন হয় বা হতে পারে। আমি ও তেমন তেমন করে প্রীতির চোখে রোগীদের পর্যবেক্ষণ করি।  কার কি ওষুধ লাগবে কার  অপারেশন দরকার কার কম বেশি রোদ আলো বাতাসের প্রয়োজন। কার শিকড়ের মাটি আলগা করে দিতে হবে, কার কতটা বেশি কম জলের প্রয়োজন। দহনকালে কার কতটা ছায়া প্রয়োজন বুঝে নিই । অধিক বৃষ্টিতে কার কি ক্ষতি হবে সেইমত সব ব্যবস্থা করি। একবার এক রোগীকে কৌতূহলে বিনা কারণে অপারেশন করেছিলাম, ভেবেছিলাম সে বুঝি বংশ বিস্তার করবে এই ভেবে । কিন্ত সে দেহ ত্যাগ করেছিল দীর্ঘ যন্ত্রণায়।  বিফলতায় খুব কষ্ট বহন করেছি বেশ কিছুদিন। কারোর পাতা হলুদ বা কুঁকড়ে গেলে পোকা লাগলে নির্দ্বিধায় সারিয়ে তুলতে পারি। আমি কিন্তু ওদের থেকে মোটেই ভিজিট নিইনা। ওরা দেবেই বা কোথা থেকে। বিনিময়ে ওরা আমাকে অনেক  আনন্দ দেয়  নব কিশলয়ে দুলে দুলে ফুল ফুটিয়ে মনে আমার গান এনে দেয় গেয়ে উঠি ‘’ চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে উছলে পড়ে আলো’’
        ডাক্তারবাবু, ওই বুঝি ঝড় উঠেছে লাল ঝুমকোলতার গাছটাকে বাঁচাতেই হবে। ও আমার স্বপ্নের বারান্দায় নতুন অতিথি। যাই বারান্দার জানলা এখনি বন্ধ করতে হবে নইলে একটা অনাসৃষ্টি ঘটবে । ভালো থাকবেন।
ইতি- বনলতা