বন্ধু সঞ্জয়
        তুই একটু অন্যরকম ছিলিস অন্যান্য বন্ধুদের মতন নয়। খাও দাও তেল মাখ তারপর বাড়ি চলে যাও। খিদিরপুর ছেড়ে চলে আসবার পর তোরা যেন ইতিহাস হয়ে গেছিস। মাঝে মাঝে মনে পড়ে তখনি  স্মৃতির ধুলো সরিয়ে তোদের এক এক করে খুঁজে নিয়ে দিব্যি গল্প জুড়ে দিই মনে মনে।
       তোর বাবা যখন মারা গেল তুই তখন নাইনে পড়িস। আমাদের ডেকে নিয়ে বললি বাপটা চলে গেল। তোরা কিন্তু সব সময় কাছে  থাকিস। শ্মশানে যেতে হবে খুব সাবলীল ছিল তোর ভঙ্গী। আমাদের আড্ডার মধ্যমণি তুই । কি করবো কোথায় যাবো কোন সিনেমা বাজারে আসছে মেয়েদের কোন কোন স্কুল কখন ছুটি হয় তোর ছিল নখদর্পণে । ধর্মতলার সিনেমা হলগুলো যেন তোকে পেয়ে খুশী হয়ে উঠত ।    একবার ধরা পড়ে গেলি মনে আছে ( A ) মার্কা সিনেমা দেখতে গিয়ে হুজ্জুতি করলি বলে পুলিশে ধরে নিয়ে গেল থানায়। কারণ’টা খুব সঠিক ছিল। তোর তখন ভালো করে গোঁফ গজায়নি। ভাবলে হাসি আসে। একবার পয়সা কম ছিল বলে তোর কথায় সব বন্ধুরা মিলে ধর্মতলা থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরলাম।  অবশ্য মিথ্যে বলেছিলি সেই বাঁচানো পয়সা দিয়ে সেন্ট্রাল সিটি হোটেলে জোরদার খাওয়া দাওয়া হয়েছিল। কিচ্ছু ভুলিনি।
     তোর মা যখন নিরুদ্দেশ হয়ে গেল তুই ও কেমন যেন হয়ে গেলি তোর মায়ের ছিল এলজাইমার অসুখ। ভুলে যেত কিছুই মনে রাখতে পারতনা। নিজেকে দোষ দিতে থাকলি  ক্রমাগ্রত –‘’আমার জন্য আমার মা এমনি করে বিশাল দুনিয়ায় হারিয়ে গেল।‘’ বড় হতে কে কেমন করে কোথায় যেন ফুটিফাটার মতন ছিটকে গিয়ে ছিলাম। তারপর অনেক বসন্ত পেরিয়ে গেছে। কেমন আছিস জানিনা। যদি কখন দেখা হয় হয়তো চিনতে ও পারবনা। তোর নামেই রাজার ডাকঘরে চিঠি পাঠালাম। যদি এই বার্তা শুনতে পাস তাহলে ধরা দিস সঞ্জয়।
তোর বন্ধু - অকুরা