“জল পড়ে পাতা নড়ে” অতীতের কথা মনে পড়ে।
যে বয়েসে সবাই কথা শিখে যায় আমি সেই বয়েসে কথা শিখে উঠতে পারিনি। সবাই ধরেই নিয়েছিল ধর্মদাসের ছোট ছেলেটা বোবা হবে। আমি আমার মতন বড় হচ্ছিলাম। আমার আনন্দ প্রকাশ ছিল একটা বাঁশের খুঁটি ধরে ঘুরে ঘুরে আবোল তাবোল শব্দ করা। আমাদের খড়ের চালের ঘরে ছিল একটা পাকা বাঁশের খুঁটি। একদিন যতটা মনে পড়ে এমনি এক গ্রীষ্মের দিনে ভীষণ ঝড়, ঝড়ের সাথে শুরু হোল বজ্রপাতের শব্দে  অবিরাম বৃষ্টি। হয়তো বৃষ্টি ভালবাসতাম তাই বৃষ্টি শুরু হতেই বাঁশের খুঁটি ধরে অস্ফুট ভাষায় লাট্টুর মতন ঘুরতে লাগলাম। হঠাৎ কি হোল কি জানি... খুব কাছেই বিদ্যুৎ খেলে গেল অজস্র আলোর পরে বিকট শব্দে আমি হারিয়ে গেলাম অন্ধকারে।
      যখন জ্ঞান ফিরল দেখি আমায় ঘিরে আমার সব আপনজন। আমি তর্জনী তুলে দিক নির্ণয় করে ইশারায় প্রকাশ করেছিলাম ... ভয়। আমার মা কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলেছিল -ভয় কি সোনা এইতো আমি তোমার মা, আমরা সবাই আছি তোমায় ঘিরে ঘিরে। তখুনি আমার আড়ষ্ট জিভ কেঁপে উঠলো ঠোঁট জুড়ে অব্যক্ত শব্দে উঠে এলো মায়ের কম্পিত ওষ্ঠ দেখে। সে শব্দ বড় পবিত্র – ‘’মা’’। মায়ের চোখে চিকচিক করে জল এলো নিমেষে । মা বলে উঠলো এইতো আমার সোনা আমায় মা বলে ডেকেছে ও পারবে আমার নিশ্চয় পারবে কথা বলতে।
    মা তারপর তিল তিল করে আমায় শিখিয়েছিল ' রবি ঠাকুরের বীরপুরুষ কবিতা''। তখন থেকেই আমি নিজেকে ভয়মুক্ত বীরপুরুষ বলে মনে করি, যেমন মা আমাকে ভয়মুক্ত করেছিল। আমিও মা’কে সুযোগ এলে ভয়মুক্ত করবার জন্য এখনও পাঠ করি সেই দাড়ি বুড়ো দাদু ঠাকুরের কবিতা।