আমি তিতলি মনে মনে কথা বলি ।
আমার জন্ম আজ হয়ে গেল ১২ দিন  চিত্তরঞ্জন সেবা সদনে ভর্তি আছি নবম দিন । বড় কষ্ট হচ্ছে দু হাতে চ্যানেল ছিল ফুলে গেছে বলে পায়ে দিয়েছে । হাত পা যাতে না নাড়াতে পারি বেঁধে রেখেছে । মায়ের খুব কষ্ট এই দৃশ্য দেখতে পারছেনা । খুব কাঁদছে, বাবার কষ্ট হচ্ছে মাঝে মাঝে কাঁদছে । কি করব বল যতদিন না ইনফেকশন ভালো হচ্ছে আমার ছুটি নেই । রাত জাগছে যারা জেঠু কাকু মামু দাদা মাসি সবাই আমার জন্য চেষ্টা করছে, যাতে আমি ভালো হযে যাই । আমি লড়ছি তোমরাও সাথে থেকো । আজ একটু ভালো এবার ঘুমাই । আমি তিতলি মনে মনে কথা বলি ।
আমি তিতলি মনে মনে কথা বলি ।
২৭/২/১৪ আজ তেরো দিন । আমি এই ভালোতো  এই খারাপ, কাল রাতে ছোট পিসি থাকতে চাইছিলনা । বাধ্য হলো থাকতে একটা ক্ষতি হয়ে গেল । ওটা আর বলছিনা । দিনে প্রায় দুই তিনজন রাতে দুই জন থাকছে । ছোট দাদার মাধ্যমিক চলছে । বড় মেসো বাড়ি পাল্টাবে ১০ তারিখ মার্চ মাসে । আমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে গেলে সবটা ঠিকঠাক হয় । ডাক্তার আমার আর শিরা খুঁজে পাচ্ছেনা, তাই নাভীতে চ্যানেল করা হয়েছে । মাস্ক এখন খুলে দিয়েছে । আজ ভালো আছি । আর কথা নয় ডাক্তারবাবু আসছে । দেখি কি বলে ! আমি তিতলি মনে মনে কথা বলি ।
আমি তিতলি মনে মনে কথা বলি ।
২৮/২/১৪ আজ ১৪ দিন হয়ে গেল এখানে আছি । আজ আম্মা আসবে দেখতে একটু ভালো লাগছে । অনেকটা সুস্থ মনে হচ্ছে । মাকে পাচ্ছিনা কাছে, নল দিয়ে খেতে হচ্ছে, খিদে পাচ্ছে খাবার আছে অথচ খেতে পারছিনা । কাছে মা এলে আমি নাকি বেশি খেয়ে ফেলছি । মায়ের’টা খাচ্ছি কিন্ত নল দিয়ে । খিদে পেলেই কান্না কাটি করছি । তবু খাবার পাবনা । ৫ ঘন্টা পর পর খেতে পাব । চাইলেই তো সব পাওয়া যায়না । ডাক্তার বাবু যা ভালো বুঝবে তাই হবে । আজ সকালে আমার মামা বাঁকুড়া চলে গেল । ওই তো আম্মা এসে গেছে । দেখি আম্মা কি বলে, কিভাবে আমায় আদর করে । আজ তিতলি যাছে আবার কাল আসবে । তোমরা ভালো থেকো ।
আমি তিতলি মনে মনে কথা বলি । ০৯/৩/২০১৪ আজ আমি ভালো নেই । মা বুঝতে পেরে গেছে তাই আর কাছে আসছে না দূর থেকে দেখছে আর আঁচল দিয়ে চোখ মুছে ফেলছে । বাবাকে ধারে কাছে দেখছিনা । বাবার থেকে খবর পেয়ে সন্ধ্যাবেলা আম্মা চলে এসেছে । আমার শরীর নাকি খুব খারাপ খুব বাড়াবাড়ি ! আমার সময় বোধ হ্য় ফুরিয়ে আসছে । আমার শ্বাসের কষ্ট হচ্ছে । আমাকে ঘিরে ডাক্তার নার্স অনেকে আমার শরীর জুড়ে কি যেন একটা কষ্ট হছে । ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা, আর যুদ্ধ করার শক্তি হারিয়ে ফেলছি । আমার জন্ম হয়েছিল নবদ্বীপের হাসপাতালে । বিচিত্র অসুখ ধরা পড়ল তাই ওখান থেকে কৃষ্ণনগর সরকারী হাসপাতালে । ওখানেও একই কথা অগত্যা কলকাতা । রামকৃষ্ণ মিশনে বেডের সমস্যা । ওরা বলে দিল চিত্তরঞ্জনে গেলে ভর্তি করে নেবে । রাত তখন ১১.২০ ভর্তি হয়ে গেলাম কলকাতার হাসপাতালে । এক মাস ও হলো না । আমাকে চলে যেতে হবে। নার্স আন্টি বলছিল, যে যদি আমি বেঁচে ও যায় কোনমতে সারা জীবন অসুস্থ থাকব । আম্মা বলছিল, আমি নাকি দেখতে পরীর মত সুন্দর । পরীদের আয়ু নাকি কম হ্য় । আমি সাধারন হলে ভালো হতো। সারা জীবন অসুস্থ হয়ে আমি বেঁচে থাকতে চাইনা । আমি চলে গেলাম .... তোমরা ভালো থেকো । এখন রাত ১২ টা ১০ বাজে, মানে ১০ তারিখ হয়ে গেল ।
চলে গেলাম টা টা বাই বাই ......... আমায় ভুলে যেও....
আমি পার্ক সার্কাসের বিশেষ একটা জায়্গায় মাটি পাব ।
যাই ........তোমরা ভালো থেকো........