একদিন হটাত করে দেখি
সময়টা পায়ে পায়ে একটু একটু করে,
পিছনের দিকে পিছিয়ে যাচ্ছে।
সাতমাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা
ঐতিহাসিক ঘোড়া জীবন্ত হয়ে
লেজ দুলিয়ে পা বদলে নিচ্ছে।
আর ঠিক তখুনি...
উল্টোদিক থেকে লালদোতলা বাস হাঁ হাঁ করে,
এসে কলেজস্ট্রীট ধরে দ্রুত ছুটে চলে গেল।
গঙ্গাকলের জলে পাইপ বসিয়ে কারা যেন
ভোরেরবেলায় বাসি রাজপথ ধুয়ে দিচ্ছে।
ওদের ভীতর কেউ কেউ আমার খুব চেনা।
কথা বলবার ইচ্ছা হোল -চিনতে পারছো?
সেই চেনা মানুষ ইশারায় বলে বলে
-খোকা ফুটপাতে জলদি উঠে এসো।
পিছনদিক থেকে টিং টিং শব্দে
হুড়মুড় করে ছুটে আসছে চলন্ত ট্রাম
মনে হোল যেন বুকের উপর দিয়ে চলে গেল।
ভাগ্যিস ফুটপাতে চটজলদি উঠে পরেছিলাম।
তারপরই, শুরু হয়ে গেল কেমন যেন দম বন্ধ অবস্থা,
তাই, হাঁটা শুরু করে দিলাম নিরুদ্দেশের পথে।


কতক্ষণ যে রাজপথ ধরে হেঁটেছি জানিনা;
ইতিহাস সাক্ষী শহীদ মিনার'কে এখন পিছনে।
একসময় নিজেকে আবিষ্কার করি,
নরম মখমল সবুজ গালিচা বিছানো
গড়ের মাঠের ঠিক মাঝখানে।
ওমনি বেজে উঠলো ভোঁ শব্দ করে সাইরেন!
সেই শব্দের অনুরননে হৃদয়ের তন্ত্রীতে
নিজের কণ্ঠ শুনি, মানসচক্ষে দেখতে থাকি...
আমার টালির চালে
মাটির হাঁড়িতে বসানো নাইনোকল্ক ফুল
আর ঠিক তখনি যেন পাপড়ি মেলে দিল।
কাছে দূরে সবাই একসুরে নাটকের মতন বলে উঠলো
-কি আশ্চর্য! কি আশ্চর্য! দেখো সবাই দেখো
ভিক্টোরিয়ার পরী ঘুরছে... ঘড়ির উলটো নিয়মে।
তৎক্ষণাৎ আমিও অবাক বিস্ময়ে দেখতে থাকি
সেই অভাবনীয় আশ্চর্য দৃশ্য।


চোখের সামনে কে যেন বাড়িয়ে দিল,
মিষ্টি মিষ্টি গন্ধের বাষ্পওঠা একভাঁড় গরম চা।
ভিতরে ভিতরে কখন যে তৃষা এসেছিল বুঝিনি
মাটির ভাঁড়ে তৃপ্তির চুমুক দিয়ে বললাম
-বাহ সুন্দর চা! কত দাম?
বুকপকেট থেকে দশটাকা বের করে বাড়িয়ে দিলাম।
লাল পাগড়ীপড়া চা'ওয়ালা ফিক করে হেসে বলে
-মাত্র দশ পয়সা দাম বাবু! থাক! পরে দেবেন।
আপনিতো এখানে প্রতিদিনই আসেন।
চায়ের এলাইচি গন্ধে স্পষ্ট মনে হোল
টাইগারের দোকানে বন্ধুরা মিলে চায়ের আড্ডায়।
অনুভবে উঠে আসে একে একে ফেলে আসা সময়
খিদিরপুরের ড্রাইডকের সেতু আকাশে ডানা মেলে দেয়।
প্রশস্ত রাস্তা ধরে বিদেশী জাহাজ
শব্দ করে সেপথ দিয়ে সাগরে মিশে যায়।


ঘড়ির টিক টিক শব্দ নিস্তব্ধতা ভেঙে দেয়।
হটাত হৈচৈ হট্টগোল... একরাশ রক্তাক্ত যন্ত্রণা...
আমায় ঘিরে একরাশ উদ্বিগ্ন রাস্তার ভিড় জটলা।
চক্রাকারে ঘিরে ঘিরে কারা যেন কি সব বলছে
একজনের কথা বুকে খুব বাজল
- লোকটা ছিল ভীষণ একরোখা...
সময়ের সাথে নিজেকে বদলাতে পারছিলনা।
সময়কে জোর করে পিছনে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।
তাইতো উপন্যাসের মতন এমন দুর্ঘটনা ঘটে গেল।