একজন মুমূর্ষ রোগীর জীবন বাঁচাতে রক্ত চাই
রক্তের গ্রুপ ‘ও’ নেগেটিভ ।


টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, সন্ধানী , ব্লাড ব্যাংক
তন্ন তন্ন করেছি । না, কোথাও ডেপোজিট নেই ।
যেন ধ্বসনামা কাল অতিক্রম করছি আমরা
যার সূচক সর্বনিম্ন এখন ।


আমি মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বর পার হয়ে আসি
স্টক এক্সচেঞ্জের সাইনবোর্ড আমার মনোযোগ
টানতে পারে না । কারণ আমার প্রয়োজন রক্ত ।  
স্রেফ একব্যাগ লাল হিমোগ্লোবিন,  
যা এই মুহূর্তে হায়দারাবাদের কোহিনূরের চেয়ে দামী বস্তু
অথচ বাঙালিরা তিন মিলিয়ন মেগাব্যাগ রক্ত অকাতরে
উৎসর্গ করেছিল স্বাধীনতার মহান বেদীতে ।  


আজ তোমার মুখের দিকে তাকাতে পারিনা ।  
স্পেনের গোঁয়ার ষাঁড়ের মত  ভয় আমাকে তাড়া করে
জলের আঘাতে পাতা নড়ার মত আত্মা নড়ে আর কাঁপে
ধৃত অপরাধীর মত মাথা নিচু হয়ে আসে
এভাবে কতটুকু আর আড়াল করা যায় ।
তবুও হাসপাতালের বিছানায় তোমার পাশে বসি
মনের অস্থির পাখিগুলো অজান্তে পালক ঝাড়ে
দু চারটা প্রেমের কবিতা শুনাই তোমাকে ।  


দেখি, তোমার ম্লানমুখে অফুস্ট হাসির বিদীর্ণরেখা  
একটি পরিত্যাক্ত মজানদী যেমন ।
সবুজ জল নেই কলকল শব্দ-সম্ভার নেই,  
অসম্ভব নীল জোছনা ছুঁতে পারেনি চোখের পাতাও ।  
বিদ্রূপের ভাষা বুঝি এরকম হয় ! হ্যাঁ, বিদ্রূপ আমার প্রাপ্য বটে।
আমি ছোট হতে থাকি । পিঁপড়ের মুখের মতন ছোট ।    


দূরে কোথাও সভা হচ্ছে তখন
বাতাসে বঙ্গবন্ধুর ব্জ্রকণ্ঠ । ৭ মার্চের ভাষণ ।
“রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব”
অনিচ্ছায় নেমে আসি হাসপাতালের বারান্দায় ।  
সেখানে কয়েকজন দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে খোশগল্পে বিড়ি ফুঁকছে,  
কেউ কেউ পানমুখে শুয়ে আছে আয়েসি ভঙ্গিতে।  


প্রিয় বঙ্গবন্ধু , এরা সবাই রক্তের ফেরিওয়ালা
বলুন, আপনার আর কত রক্ত দরকার ?
“উপায় নেই গোলাম হোসেন” জাতীয় ভাষা
বাংলার নবাবের মুখে মানায় না
৭ মার্চের ভাষণ তখনও চলছে
জনাব বঙ্গবন্ধু, আপনি হয়ত জানেন না
আপনার বাংলায় রক্ত এখন বড় বেশী দুষ্প্রাপ্য ।