নিভু নিভু সকালটা বেমক্কা হাত ধরে বিছানা থেকে টেনে নামিয়ে বললে একটা ছবি আঁকো তো।  বেশ লাল নীল হলুদ মেঘ, এক টুকরো রামধনু, একখানা ভোঁ  দেওয়া স্টীমার আর কয়েকটা কাদা মেখে হুটোপুটি করা কুকুরছানা। পারলে একটা লেবেল ক্রশিংও এঁকো চুমকি দেওয়া, পেছনে সর্ষে ফুলে ভরা ক্ষেত আর দুটো ডাহুক পাখি।


একটা চিলেকোঠাও এঁকো হাপুস আকাশের নীচে ভাঙ্গা হাতলের চেয়ার ওয়ালা। আর হ্যাঁ এক এলো কেশী এঁকো সপসপে, আকাশের দিকে দুহাত তোলা। মুখটা যেন সুর্যি খুঁজছে। তবে মুখ এঁকো না যেন, তোমাকে তো সব কিছুই বলে দিতে হয় আবার, মুখের জায়গাটায় একটু দুঃখঘেষা আঁধার দিও।  যা কিনা বেয়ে বেয়ে নামে, নেমে যায় নেমেই যায়, শরীর বেয়ে বুক বেয়ে আলুক ঝালুক শাড়ির ভাঁজ বেয়ে, নেমে যায় অনন্তের দিকে।


শ্যাওলা, কেন্নো আর ভেজা প্যাঁচা না আঁকলেও চলবে, তার বদলে কয়েকটা গন্ধ ওয়ালা কুর্চি ফুল এঁকো, ক' খানা ভর দুপুরে ভেসে যাওয়া গাঙচিল আর শচীন কত্তার গান।


আমি ভুরু কুঁচকে বললাম, একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে নাকি?


সকাল বলল, সে তো কবেই হয়েছে, এখন তো তুমি শব্দ খোঁজ, রাস্তাগুলো উল্টেপাল্টে দেখো নিয়ম করে, কখনো কখনো তেপান্তরের খোঁজেও তো যাও। তুমি পারবে।


বললাম আচ্ছা ধর যদি আঁকি, তো আঁকব কোথায়। পেছন ফিরে চলে যেতে যেতে সকাল বলল, বাইরে বৃষ্টি ধোয়া আকাশ রইল, রঙ ফুরোলে নিজের দুঃখ রইল, আর সন্ধে রাতের আঁধার রইল। বাকি তুমি বোঝ।


বাইরে বেরিয়ে দেখি জটা পাগলা বসে বসে উকুন মারছে শিউলি গাছের নীচে। দেখে বললে, কাল বন্ধুদিনে বন্ধু খুঁজে পেলি? আমি বললাম ঠিক জানি না। বললে বন্ধু কেমন হয় জানিস? বললাম ঠিক জানি না। বললে মাটির হাঁড়িতে ভাত রাঁধলে যে মিষ্টি ঘন ভাপ বেরোয়, সেটাই বন্ধু রে। পৌষের ঠান্ডায় ছেঁড়া কাঁথা যে ওম দেয়, সেটাই বন্ধু।  চৈতের ভর দুপুরে সাগর দীঘির নীল গভীর জল যে অভাগীদের... ধুস, তোকে বলে কি হবে। আজ হিরোশিমা দিবস, তুই তো আবার বোম খুঁজতে বেরোবি...