কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি।  


গাঁয়ের লোকেরা ওকে বলতো কালি।
মা ঠিকে ঝি, বাবা মাতাল রিকশাওয়ালা।
প্রথম যখন দেখি, গুটিশুটি পায়,
মায়ের আঁচল ধরে আসা যাওয়া আমাদের বাড়ি।
অপার বিস্ময় দুটি বড় বড় নিস্পাপ চোখে।
খেয়ে পরে বেঁচে থাকা ছাড়া, আরো কিছু আছে জীবনেতে?
পড়াশোনা, টিভি দেখা, গান নাচ আরো কতো অবাক বিস্ময়।
সাথে ছিল মায়ের ভাগ বসানো খাবারের লোভ, অভুক্ত পেটে।


কেটে যায় মাঝে কিছু বছর সময়, হঠাত আবার দেখা।
অবাক বিস্ময়ে দেখি, যৌবন বানে ভেসে হাসে,
এঁটো কাঁটা খাওয়া কৃষ্ণকলি, শ্রাবনের ধারায় স্নাত নবযৌবনা,
রূপের প্লাবন যেন, এক পিঠ খোলা চুল, সেই দুটি নিস্পাপ চোখ।
লাজুক লাজুক হেসে, ‘ভালো আছো ছোট বাবু?’ শুধায় আমাকে।


আবার অনেক দিন পরে, দেখা নয়, খবর পেলাম।
ঠিকে ঝি মায়ে নাকি, ধরেছে আরেক রিক্সাওয়ালা।
বাবাটা মদের তেজে প্রায় মর মর।
বামুন পাড়ার ঐ বড় সরিকের বড় ছেলে,
নিয়েছে সকল দায়, গার্জেন পেয়েছে কৃষ্ণকলি।
বদলে দিয়েছে সব সঁপে।


দিন যায়, মাস যায়, বছর ফুরায়,
ফুরিয়েও ফুরায় না কৃষ্ণকলির কথা।
বামুনের ছেলে নাকি ঘোরতর সংসারী আজ।
নব বিবাহিতা বৌ এসেছে অনেক পণ নিয়ে।
কৃষ্ণকলির ঠাঁই শেষ মেশ খারাপ পাড়ায়।


অবশেষে হোল দেখা কপালের ফেরে,
ইস্টিশনের পথে সাঁঝের বেলাতে,
দাঁড়িয়ে রাস্তার ধারে,
অত্যাচারী অনাচারী ছাপ মুখে নিয়ে।
পালাতে গিয়েও কেন হঠাত সামনে এসে হাসে।
‘ভালো আছ ছোটবাবু?’ কান্না চেপে বলে ওঠে।
বলি তারে, ‘ভাল আমি, তোর কি খবর’।
পিছু ফিরে চলে যেতে যেতে, আচমকা বলে ওঠে,
‘ভালো থেকো তুমি, আমি জেনো ভালো নই আর’।


আরো কিছুদিন পরে আসলো খবর।
জুড়ালো সকল জ্বালা ঝিলের জলেতে,
গাঁয়ের লোকের কালি, কৃষ্ণকলি আমি বলি যারে।