দুর্গার সাথে দেখা হল আমার
পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে
কুয়াশা ঘেরা পথ স্পষ্ট হচ্ছে ক্রমশ
মাথায় কাঠ বোঝাই নিয়ে হেঁটে চলেছে দুর্গা
দুরের হাটে বিক্রি করে কিছু টাকা আসে
যা দিয়ে কেনা হয় সারাদিনের শস্যদানা।
সন্তানের ঘুম ভাঙার আগে দুর্গা পৌছে যায় রান্না ঘরে, উনুন জ্বলে।
পরদিন ভোরের আলো ফোটার আগে
দুর্গার কুঠারের আওয়াজ শুনলাম আমি
তারপর থেকে সেই আওয়াজ
                                রোজ কানে বাজে।


দুর্গাকে দেখলাম আমি আদ্রা স্টেশনে  
ঘড়িতে সাড়ে চারটা, ভোর হবে হবে
রাত জাগা ক্লান্ত দু'চোখ ট্রেনের অপেক্ষায়।
বাজার খোলার আগেই,
পৌছে দিতে হয় কাচামাল তাকে
শরীর মনে ব্যস্ততা।
ট্রেন ঢুকতেই আমার দুর্গা হারিয়ে গেল
                                  মানুষের ভিড়ে।


সেদিন দুর্গাকে পথে নামতে দেখলাম আমি
                    থমথমে গোটা রাজপথ
সকলের দৃষ্টি আমার দুর্গার দিকে।
নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে গেল সে
চোখের পলকে একটা মদের ঠেক
                      মিশে গেল মাটিতে।
     দুর্গার রক্তচক্ষু দেখলাম আমি।


দুর্গার সাথে দেখা হল আমার
ঝাড়খন্ডের এক প্রত্যন্ত গ্রামে।
আজও ইলেকট্রিক পৌছায়নি
পুরুষদের কাজ করতে যেতে হয় ভিনরাজ্যে।
দুর্গাকে দেখলাম আমি ঘর বানাতে
দুর্গাকে দেখলাম মাঠে ফসল ফলাতে,
ইটভাটায় দেখলাম আমি দুর্গাকে সেখানে।


বাবার মৃত্যুর পর দুর্গা এখন
টিউশন পড়িয়ে সংসার চালায়।
বাড়িতে মা, ছোটো ভাই, বোন।
বিয়ের বয়স পেরিয়ে যায় দুর্গার
আমার দুর্গার হুশ'ই নেই।
অঝোর ধারায় বৃষ্টি,
আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি উপেক্ষা করে
আমার দুর্গা আলো আঁধার পথে একা।
কিছু টিউশন অনেকটা দুর পথ।


আমার দুর্গা বিধবা। দুই সন্তান জননী।
একটা প্রাইভেট স্কুলে পড়ায়।
আমার দুর্গা দ্বিতীয় বিয়ে করেনি
ভাবতেই পারেনা এমন,
কারুর কাছে সাহায্য হাত পাতেনি
আমার দুর্গা একাই একশো।


দুর্গাকে দেখলাম আমি ঘরে
বাইরে দেখলাম আমি দুর্গাকে
কাল দুর্গাকে দেখেছি আমি
আজ দুর্গাকে দেখলাম।   ...দুর্গাকে।