আজ নিয়ে এলাম চীন দেশের পাঁচ কবিতা সিরিজের সাত নম্বর পর্ব। আজ আমি বলব চীন দেশের বিখ্যাত কবি ঝেন মিং-র কথা। সাথে থাকবে তার লেখা পাঁচটি কবিতার অনুবাদ।
কবি ঝেন মিং, ১৯২০ সালে ফুজিয়ান প্রদেশের মিনহৌ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৪০ দশকে জাপানের সাথে যুদ্ধের সময় ওনার কবিতা লেখার শুরু। ওনার সেই সময়কার কবিতায় ভীষণ ভাবে পশ্চিমি অনুপ্রেরণা লক্ষ্য করা যায়। চীনের ছ্যাংগং থেকে দর্শন শাস্ত্রে স্নাতক হন ঝেন মিং আর ছাত্র জীবন থেকেই ওনার আধুনিক ঘরানার কবিতা প্রকাশ পায় বিভিন্ন পত্রিকায়। ১৯৪৩ সালে, উনি অ্যামেরিকা যান উচ্চশিক্ষার জন্য। সেখানে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাহিত্যে এম এ করে ১৯৫৩ সালে চীনে ফিরে আসেন। তারপর তিনি বেজিং বিশ্ববিদ্যালয়য়ে পাশ্চাত্য সাহিত্যের অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৬ সালের পর উনি বেশির ভাগ কবিতা রচনা করেছেন। ১৯৮০ সালে ওনার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘The Nine Leaves’ প্রকাশিত হয়। চীনা সাহিত্যের বিখ্যাত ‘Nine Leaves’ কবিদের মধ্যে ঝেন মিং অন্যতম।
ওনার লেখা পাঁচটি বিখ্যাত কবিতার অনুবাদ দিয়ে এই লেখা শেষ করছি। আশা করি খারাপ লাগলো না। কেমন লাগলো জানাবেন দয়া করে।



                                 রাজহাঁসের ডানা


স্বাধীনতা ও বন্দিদশা মধ্যে
রাজহাঁস হ্রদের মাঝে সাঁতার কাটে।
তার চলাচলে কোন বাঁধা নেই,
কেউ কেটে দেয়নি তার ডানা।
রাজহাঁস সূচারূভাবে বাস করে,
একটি অন্তর্বর্তী অবস্থা।
কেউ কি জানে
তারা সৌভাগ্যবান?


                                      দারিদ্র


আমাদের কাছু যেটুকু আছে, সেটাও বাড়বে, ধীরে ধীরে,
কোনদিন আসবে না, যেখানে আমাদের কিছুই নেই।
শরতের বিকেলে, যেমন জন্ম নেয় স্বল্প সুবুজ ঘাস,
মরুভূমি কখনওই জন্ম দেয় না সবুজের স্বপ্ন।

দার্শনিক মন, ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে,
মিশে যাই বিপ্লবীদের দলে;
সরকারও মেনে নেয় ধীরে ধীরে,
আছে আর নেই-য়ের পার্থক্যটা।
দারিদ্র যদি একফালি জমি হত,
কতই না লড়াই হত তাকে নিয়ে,
থাকত না মুছে যাওয়ার ভীতি।


একদিন তুমিও বুঝবে এই লড়াইয়ের মানে,
কিভাবে ক্ষুধার্ত চোখ কথা বলে,
কোন গৌরব নেই, নেই আশ্বাস।


                                 বরফ, শুভ্র হতে ব্যর্থ


বরফ,
জানি না
তুমি শুভ্র কি না?
ছ’তলার কালো ঘরটা থেকে
চুইয়ে পড়ে বরফ গলা জল।


একটা পুরানো ঘণ্টা, চার্চের,
জানান দেয় একাকীত্বের যন্ত্রণা,
ছুঁয়ে দেখে বরফ, চুম্বন করে,
তারপর বাতাসের সাথে
উড়ে যায় স্বপ্নের হাত ধরে।
অপরিষ্কার মনের ভীতর,
পৌরুষের মিথ্যে গৌরব,
ছুঁতে চায়,
মায়ের স্নিগ্ধ হৃদয়।


জানালার বাইরে,
বরফ পড়ে,
লাল, নীল, কখনও সবুজ।
কখনও বা ব্যাথার মত কালচে।
ধুসর একাকীত্ব,
ঝরে পড়ে
সেই ঘণ্টার শব্দ ছুঁয়ে।
বরফ,
শুভ্র হতে ব্যর্থ।


                                      ছোট্ট কামরা


ছোট্ট কামরাটা, কি শান্ত,
মাঝেমাঝেই ফিরে আসে অতীত,
মায়ের গর্ভে শিশুর উচ্ছ্বাস।


কঠিন দেওয়াল, ছুঁড়ে ফেলে দিও,
কেউ কেউ হাসবে,
হাসুক, সব ক্রীতদাস।
শুধু কঠোর চিন্তা ভিড় করবে,
প্রচণ্ড আনন্দের পর, একটা শীতল প্রবাহ,
দিনের শেষে রাতের আগমন।


ছোট্ট কামরাটার দেওয়ালগুলো শক্ত,
আমার চিন্তা ফিরে আসে ধাক্কা খেয়ে।
বারবার, যেন পাহাড়ের পাদদেশে
ছোট্ট উপত্তকা।
সত্যি করে বল দেখি,
আমি কে?


                                   কাঁচের জানলা


দুনিয়া স্বচ্ছ জানালা চায় না,
ওখানে সব দৃশ্যমান।
ঠিক যেন নগ্ন এক মানুষ,
ভীষণ লজ্জা!


কখনও আবার চেয়ে নেয় স্বচ্ছ জানলা,
যখন সাজিয়ে রাখে ঘরের ভীতর,
যখন,
জানলার ধারে এসে দাঁড়ায় এক বৃদ্ধ দুনিয়া।


মানুষ কখনওই চায় না একটা উজ্জ্বল জানলা,
মোটা পর্দায় ঢেকে রাখে কালো রাত।
আলো আসে মোমবাতি থেকে, টিমটিমে।
ভালোবাসা কি রাত চেনে?


দুনিয়ে আগলে রাখে আধা স্বচ্ছ জানলাকে,
ছায়া থেকে লক্ষ্য করে সব।
মিথ্যে সৌন্দর্য দেখে চোখ,
কি অসাধারণ!


শুধু একটা ছোট্ট শিশু,
জানলার কাঁচে নাক চীপে,
দেখে যায় দুনিয়ার সৌন্দর্য।
তার চোখেই বেঁচে থাকে কবিতা।


আজকাল, অফিসে কাজের খুব চাপ। লেখার সময় পাচ্ছি না একদম। তার উপরে অবসর সময় যেটুকু পাই, তার অনেকটাই চলে যাচ্ছে অনুবাদের বইটা দুটোর পিছনে। এই সিরিজের পরের লেখা কবে দেব জানি না। আপাতত চীন দেশের সিরিজ বন্ধ। যে গুটি কয়েক মানুষ আমার এই লেখা পড়েন তাঁদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।