মাঝে মাঝেই আজকাল দূর দৃষ্টিতে   মাকে দেখি
চৈত্রের কাঠ ফাটা রোদে , বৈশাখের ঝড়ে
, শীতের জীর্ণতায় , বসন্তের আনন্দ মনে, হেমন্তের শীতল সায়ান্নে
আষাঢ়ের প্লাবিত আঁখি নিয়ে   অপেক্ষমান আমার মা ।

অভিমানী মার বড়ো অবিশ্বাস, সন্দেহ, আমি বুঝি আর ফিরব না ,
যতই বলি "ফিরব মা , ফিরব
একদিন ফিরব  শেষ বারের মতো ,
তন্ময় হয়ে তোমার সব কাহিনী শুনব  ,"
মা হেসে বলে , " ফিরবি, আমি মরে গেলে “।

শত কষ্টেও হাসতে হাসতে
স্মৃতি জড়িত আঁচলে  চোখ মুছে  মা ।

"তুই আসবিনা দেশে জানি,
বিদেশের ভাত তোর মজা লাগে বেশি" ।

মায়ের আক্ষেপে ম্লান হয়ে যায় মনটা ,
নিস্তেজে  নুইয়ে যায় সজীব পল্লবিত বনটা  

কাল বাবা ছিল , আজ  মামা নেই
আগামী কাল ........
হঠাৎ বিস্বাদ লাগে এই বিত্ত , এই লোকালয়,
প্রশান্ত সাগরের প্রসারিত আলিঙ্গন,
জীবনের  তাল, লয়,  সব সব  হারিয়ে যায় ।
ভাঙ্গে দেহ, ভাঙ্গে মোহ, ভাঙ্গে মন ।
হয়ত মার  কথাই  ঠিক ,
দূর দ্বীপে বসে অজান্তেই  দিন গুনছি
গগন বিদারিত খবরের  আশঙ্কায়  ," হতভাগা, তোর মা যে আর নেই "।

"অগ্নি কোণে আমি তাকাতেই পারি না, সোনা,
তাকালেই কলজেটা ধক  করে উঠে , মনা ,
তুই যে থাকিস সেই  দিকে,  সাত সাগরের ওপারে  
কেন থাকিস বাবা অত দুরে ?"
"কবে বাড়ি আসবি তুই ?
এত ভালো লাগে বিদেশ বিভূইঁ ?
তুই আসবি আমি মরে গেলে ?
বাংলাদেশে সবার ভাত মিলে , তোর মিলে  না ?
তুই বাংলাদেশের  ছেলে না ?"



হীরের টুকরো ছেলে বোঝে না মায়ের ব্যাকুল মন
কি জানি কখন চলে গেছে বহু দুরে
বানভাসি শালুকের মতন ।

উত্তর আসে না মুখে
বিশ্ব অপরাধীর মত চেয়ে থাকি ঝুলন্ত ছবিটার দিকে
প্রার্থনা রত আমার মা
শুভঙ্করী মা যেন চোখেই রাখছে  চোখের অমঙ্গল পানি ,
মুখ লুকিয়ে ঢাকতে চাইছে অপ্রিয় কষ্ট খানি
  বিধাতাকে ডাকছে দু হাত তুলে
" দুধে ভাতে বেঁচে  থাকুক সহস্র বছর,
  আমার সোনার ছেলে "

টেলিফোনের লাইন কেটে যায় ,
নিভে যায় দখিনা তারার আলো।
একীভূত হয় পৃথিবীর সমস্ত কালো, সমগ্র ভাবনা ।
অন্ধকার ভেদ করে  স্পষ্টতর হতে থাকে  মাযের যতিহীন আকুল কামনা ।
ফিরে আয় বাবা ফিরে আয়, ফিরে আয় না !!!
বাংলাদেশে সবার ভাত মিলে , কে বলে ? তোর মিলে  না ! !!