দাদু যখন রূপকথার গল্প শোনাতেন।
তিনি তখন রাজ্য,রাজকন্যা রাজকুমারী আর রাক্ষস খোক্কসের কথা বলতেন। রাজার কথা উঠলেই আমি জানতে চাইতাম আব্বার কথা। দাদু বলতেন আব্বা নাকি সেখানেই থাকেন।


গল্পের ফাঁকে ফাঁকে আমি দৌড় দিতাম সাতসাগর তেরোনদী ডিঙ্গিয়ে আব্বার কাছে। যেখানে আব্বা রাজা,উজীর কিংবা নাজিরদের সাথে বসে বসে খোশগল্পে মেতে আছেন। আব্বাকে ছুঁতে যাবো; অমনি গল্পের ভেতর থেকে নিমিষেই ঢলে পড়তাম দাদুর কোলে।


একদিন রূপকথার ঘোড়ায় চড়ে আব্বা ফিরলেন আমাদের কাছে। আব্বাকে ছুঁতে না ছুঁতে! আব্বাকে দেখতে না দেখতেই নানান অজুহাতে আব্বা আবার ফিরে গেলেন রূপকথার দেশে।


একদিন দাদুর গল্প শেষ হয়ে গেলে আব্বা আরেকবার ফিরলেন আমাদের কাছে। এবার দাদুকে না ছুঁতে পারার যন্ত্রণায় আব্বা আমাকেও ছুঁলেন না।


দাদুর গল্প শেষ হয়ে যাওয়ায় আব্বাকে
নিয়ে আমার আর কোনো গল্পই রইলো না। শেষবার যখন আব্বা ফিরে এলেন। এবার আমি নিজেই হয়ে গেলাম রূপকথা।জলেস্থলে অন্তরীক্ষে আমার পদচারণা। সিন্ধু সেঁচে মুক্তো আনার নেশায় আমি বুঁদ। এবার আব্বা আমাকে ছুঁতে চাইলেও সঙ্গতকারণে
আব্বা আর আমার নাগালটিও পান না।


আমাকে না ছুঁতে পারার অভিমানে আব্বা আবারও ফিরে গেলেন রূপকথার দেশে। এবার যে গেলেন আব্বা আর ফিরে এলেন না। আমি এখন এখানে সেখানে ওখানে
খালি রূপকথার গল্প বলে বেড়াই।চারপাশে সবাই যার যার গল্পে মশগুল। আমার গল্প কেউ আর শোনে না।