একদিন মাঝরাতে
চাঁদটা ঢুকে পরে আমার ঘরে!
জ্যোৎস্নার বন্যায় ভেসে যায় সাদা দেয়াল।
চাঁদ কণারা ভাসিয়ে নিয়ে যায়
          আমার আমিকে
          দিগন্ত ছাড়িয়ে অনন্তের দিকে।


আকাশ-ভাঙ্গা জ্যোৎস্নার সেই স্বপ্ন-পথে
সঙ্গী হয় ভেঙ্গে-পরা এক তারা।
তারাভরা সেই রাতে,
          আমি শুনি তার ভাঙ্গনের গল্প।


ভালবেসেছিল আমার তারাটা, আরেক তারাকে।
স্বপ্ন দেখেছিলো পাশাপাশি পথ চলার
মহাশূন্য থেকে মহাশূন্যান্তরে
সহস্রাব্দের পর সহস্রাব্দ ধরে।
গড়ে নিয়েছিলো নিজেদের এক মহাবিশ্ব
          যেখানে মাধ্যাকর্ষণ এর শক্তি ছিলো অনেক।
গ্রহরা ছিলো, আর আকাশটা ছিলো সুনীল।


একসাথে বহু সহস্রাব্দের সেই পথচলায়
          দেখেছিলো কতো উল্কার ক্ষয়
          আর পথভ্রষ্ট তারার পতন!
শুনেছিলো উজ্জলতর তারাদের ডাক
লোভনীয় অন্য ভুবন এর আহ্বান!
নিজেদের তৈরী মহাবিশ্ব থেকে
          বহির্মুখী টানও ছিল অনেক।
সহস্রাব্দের পর সহস্রাব্দ সাথে থাকার অভ্যাসে
          বিশ্বাস ছিলো জীবনে।


সেই অভ্যাস ই কাল হোল আমার তারাটার।
বুঝতে পারেনি, কবে ফাটল ধরেছিলো অন্য তারাটার ভিতর!
কবে সব হাইড্রোজেন হারিয়ে বসেছিল তার তারাটা!
যখন বুঝলো, ততদিনে ফাটল দিয়ে ঢুকে পরেছে
          কীট পতঙ্গেরা, খেয়ে নিয়ে ওই হৃদপিণ্ডটা
          বদলে দিয়েছে আমার তারার তারাটাকে!


যখন বুঝলো, আকাশের রঙ ততদিনে বদলে গেছে।
          নীল আকাশ ছাই হল, তারপর আরো অন্ধকার।
ভেঙ্গে পরার ভয়ে তারাটা ছুটতে শুরু করলো
          নতুন এক আকাশের সন্ধানে।
...


গল্পটা শেষ করতে পারেনি আমার তারাটা।
আমার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিলো, কিংবা
তারাটাকে ছুটতে হয়েছিলো তার
          মহাবিশ্ব কে নিয়ে নীল এক আকাশের খোঁজে।
          যে আকাশে সে বাঁচিয়ে রাখবে তার তারাটাকে!
          পিষে মারবে কীটপতঙ্গদের, আর
          ক্রমাগত জোগান দিয়ে যাবে হাইড্রোজেন।
...


অনেকদিন আগের স্বপ্নে দেখা সেই তারাটাকে
আর খুঁজে পাইনি কখনো।
স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট আছে, তবু জানি
ও পারবে তার মহাবিশ্ব কে বাঁচাতে।
ওরা খু৺জে পাবে অন্য এক আকাশ
          নীল না হলেও যা অন্ধকার হবে না।


সেই আকাশের নীচে, গ্রহ – নক্ষত্র নিয়ে হয়তো
কাটিয়ে দিবে আরো কয়েকটা শহস্রাব্দ!


কিন্তু
যে ভাঙ্গনের গল্প সে বলেছিলো আমায়,  
বিশ্বাসভঙ্গের যে বেদনা আমি দেখেছিলাম তার চোখে,
সেই ভাঙ্গন আর বেদনা তো কুরে খাচ্ছিলো তার হাইড্রোজেনকেও!


তারাটার মুখ আমি দেখেছিলাম।
তাই জানি,
মহাবিশ্বের মাঝে থেকেও চলবে তার নিরন্তর জ্বলন!
নিজের ভুবন কে বাঁচাতে ক্রমাগত চলবে তার হাইড্রোজেন-ক্ষরণ।


যে স্বপ্ন সে দেখেছিলো তার তারাটাকে নিয়ে,
ওই জীবন সেই স্বপ্নের নয়।
সময়ের আগেই তাকে ফুরাতে হবে।
ভালবাসা থেকে যাবে।
হাইড্রোজেনবিহীন তারাটা
তার মহাবিশ্বকে সাথে নিয়ে,
কাল গহ্বর হয়ে হারিয়ে যাবে দূর আকাশে!