একটা ঝর্ণা ছিল
উচ্ছল টলমল, জল ছিল নীল।
নামছিলো...সবুজ পাহাড়ের গা বেয়ে
দূরন্ত বেগে, দূর সমতলের দিকে।
প্রানবন্ত বিশুদ্ধ প্রকৃতি – কন্যার মতো
নদী হয়ে, আরো দূরে সমুদ্রের সন্ধানে!


ছেলেবেলায় তার সঙ্গী ছিল অনেক।
...পাখীরা ছিল, শরীর-জুড়ানো বাতাস ছিল,
...উদাত্ত আকাশ ছিল, চন্দ্র ও সূর্যের আলোর খেলা ছিল,
...আর ছিল অন্ধকারের মায়া!
উপচে পড়া জলের ছোঁয়ায়,
রঙ্গীন হয়ে উঠত ভীড় করা মানুষগুলির জীবন।


নীল আকাশের নীচে, উর্বর ওই সবুজ ঘাসে শুয়ে
আকাশ দেখতাম যখন, সে তখন কথা বলতো অনেক।
...কলকল সেই জলতরঙ্গ আমার কৈশোরের স্মৃতি এখন।


ছেলেবেলায় তৃষ্ণা ছিল ভীষণ!
ইচ্ছা ছিল একদিন চাঁদ-রাতে ডুব দিবো সেই উপচে পড়া ঝর্নায়,
আর প্রান ভরে পান করে নিবো সেই অমৃত জল!
ইচ্ছা ছিল এক মায়াবী জ্যোৎস্নায় যখন ভীড় থাকবেনা,
শুয়ে থাকব তার পাশে আর শুনব তার কথা... সারারাত!
ইচ্ছা ছিল এক দারুন ভোরে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হবো
তার মৃত্যুঞ্জয় জলে, সাঁতরে চলে যাবো
তার সাথে, যতদূর দুচোখ যায়...
...পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে, উপত্যকার ভাঁজে ভাঁজে,
...পিচ্ছিল সমতলে, প্রানবন্ত নদীর বাঁকে,
...বিপুল উচ্ছ্বাসে... সমুদ্র সঙ্গমে!


ছেলেবেলার ঝর্নাটা একদিন, সত্যিই নদী হয়ে গেলো।
আমি তখনো সাঁতারু হয়ে উঠিনি, ধরতে পারিনি তাকে,
আটকাতে পারিনি তার উপচে পড়া জল কে।


কষ্ট ছিল।


তারপর একসময়... কৈশোর ছাড়িয়ে তারুণ্যে,
সেখান থেকে...জীবন–যুদ্ধে।
সময়ের প্রলেপ পড়লো স্মৃতি তে।
উপচে পড়া ঝর্নাটা ঝাপসা হোল
ফ্রেমে বাঁধা পুরনো স্মৃতির মতো।


তবু...সেই সব নীদ্রাহীন রাতে,
...নিদারুন কোন পরাজয়ে, জৈবিক ব্যর্থতায়,
   এখনো আমি... ফিরে যাই কল্পনায়
   ...আমার ঝর্নাটার কাছে।
              খোলা আকাশের নীচে, সবুজ ঘাসে শুয়ে,
উপচে পড়া জলের গন্ধে, আর
তার কথার কলকল ছলাত ছলাত শব্দে
                    ফিরে যাই কৈশোরে।
                    ফিরে পাই নতুণ প্রেরনা
                    পরের যুদ্ধের জন্যে।


একদিন আমি ফিরে যাব তার কাছে
মাঝ রাত্তিরে, যখন সে থাকবে একাকী!
জিজ্ঞেস করবোঃ
               “ক্যান্ তুমি নদী হইয়া গ্যালা?
               সাগরের লোভে ঝর্নাটারে হারাইলা!
              আমারে কও তুমি তোমার কথা
              পাইসো কি তুমি যা খুজতাসিলা?
              সাগর কি তোমারে চিনে?
              সে কি তোমার মন জানে?
              আমারে কি তোমার লগে লবা?
              ভাসাইলে ভাসাবা, ইচ্ছা হইলে ডুবায়া দিবা!”