পর্ব ১: আমি কার রাষ্ট্রে বাঁচি?
আমি কার রাষ্ট্রে বাঁচি?
যেখানে মুখোশের নিচে গণতন্ত্র হাসে,
আর পেছনের অন্ধকারে কাঁদে ন্যায়বিচার।
আমি কার সমাজে হাঁটি?
যেখানে শিশুরা শেখে—
চুপ থাকো, প্রশ্ন কোরো না।
আর বুদ্ধিজীবী শেখায়—
ক্ষমতার কাছে মাথা নত করো।
আমি এক চোরা আগুন,
শাসনের শীতল বাতাসে নেভে না,
আমার নৈতিকতা মাটির ভিতর জন্মায়,
সে রাষ্ট্রের আইনকানুন দেখে না,
দেখে কেবল সত্য আর মঙ্গল।
কেন আমার বিবেক কাঁদে,
যখন গরিবের ঘাম নিয়ে
মন্ত্রীদের রাজপ্রাসাদ গড়ে উঠে?
কেন আমি স্বপ্ন দেখতে ভয় পাই,
যেখানে স্বপ্ন দেখানো হয় শুধু ভোটের মৌসুমে?
আমার কলম জেগে উঠে,
আমি রাষ্ট্রকে জিজ্ঞেস করি—
"তুমি কি মানুষ গড়ো,
না মানুষ ভাঙো তোমার আইন দিয়ে?"
আমি তো বিদ্রোহ করি না,
আমি শুধু নৈতিক হই,
আর এই রাষ্ট্রে সবচেয়ে বিপজ্জনক এখন
একজন নৈতিক মানুষ।
পর্ব ২: আমার বিপ্লব নৈতিক হবে
তোমরা ভাবো—
বিপ্লব মানে আগুন, মানে রক্ত,
আমি বলি—
বিপ্লব মানে বিবেকের বজ্রনিনাদ,
যা কোনো শাসকের বন্দুককে ভয় পায় না।
আমি বন্দুক হাতে নিই না,
আমার হাতে কলম—
যার শিরায় শিরায় আগুন আছে,
যে আগুন জ্বলে উঠে
যখন দেখি দুর্নীতির পাশে বসে ন্যায়।
আমি স্লোগানে নয়,
শব্দে বিদ্রোহ করি,
কবিতায় রচনা করি এক নৈতিক রাজনীতি—
যেখানে মানুষের মুখ
ক্ষমতার চেয়ারের চেয়ে মূল্যবান।
তোমাদের গড়া রাষ্ট্রে
আমার মতো মানুষ অচেনা,
কারণ আমি নত হই না,
কোনো তোষণের অলংকারে মুগ্ধ হই না।
আমি বলি— গণতন্ত্র মানে শুধু নির্বাচন নয়,
মানুষের কণ্ঠ, প্রশ্ন,
এবং তাদের জীবনের মর্যাদা।
আমার বিপ্লব ধ্বংসের নয়,
তৈরি করার।
আমি ভাঙি না—
পচে যাওয়া কাঠামো বদলাই,
নৈতিকতার নতুন ভিত গড়ে তুলি
যেখানে রাষ্ট্র ভয় পায় না,
বরং সম্মান করে মানুষকে।
আমি সেই কবি,
যে কেবল অনুভব করে না—
লড়ে, লিখে,
এবং বদলায় সময়।
পর্ব ৩: আমি বিকল্প দেখাই
আমি শুধু আগুন নই—
আমি আলোও,
যা ধ্বংসের পরে গড়ে
এক ন্যায়নিষ্ঠ ভবিষ্যৎ।
আমি বলি—
রাষ্ট্র এমন হতে হবে,
যেখানে মানুষের পরিচয় হবে তার চিন্তায়,
নয় কেবল জন্মের কাগজে।
আমার রাষ্ট্রে
নীতিনির্ধারক হবে তারাই—
যারা নিজের নৈতিকতা নিজের ভেতরে গড়েছে,
আর জনতার মুখোমুখি দাঁড়াতে ভয় পায় না।
আমার বিকল্পে কোনো হুইসেল ব্লোয়ার একা পড়ে থাকে না,
কোনো প্রতিবাদী কবির ঘরে রাতের পুলিশ যায় না।
আমার বিকল্পে প্রশ্ন মানেই শত্রুতা নয়—
বরং প্রমাণ যে রাষ্ট্র এখনো সচল।
আমার রাষ্ট্র হবে—
আকাঙ্ক্ষার নয়, দায়িত্বের;
প্রভুত্বের নয়, সহযাত্রার।
আমি চাই এমন রাষ্ট্র
যেখানে সংবিধানের পৃষ্ঠা পাল্টায়
মানুষের কল্যাণে,
না যে-কোনো গোষ্ঠীর সুবিধায়।
আমি চাই—
অর্থনীতি নয়,
নীতি হোক উন্নয়নের মানদণ্ড।
চাই—
অন্ধ আনুগত্য নয়,
সচেতন সমর্থন।
আমার বিপ্লব কেবল লড়াই নয়,
আমার বিপ্লব গঠনমূলক,
আমি রাষ্ট্র বদলাই—
প্রতিবাদের ভাষায় নয়,
প্রতিশ্রুতির নৈতিক কাঠামোয়।
পর্ব ৪: রাষ্ট্র যখন আমার মুখ দেখে ভয় পায়
রাষ্ট্র আমার দিকে তাকায়—
ভেবেছিল, আমি হবো চুপচাপ, মাথানত এক নাগরিক,
কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে যাই প্রশ্নের মতো,
যে প্রশ্নে রাষ্ট্রের মুখ উন্মোচিত।
আমি কোনো ব্যানারে বাঁধা পড়িনি,
কোনো দলের মঞ্চে উঠিনি,
তবু আমার নৈতিক উচ্চারণে
ভয়ার্ত হয়ে ওঠে প্রশাসনের চেয়ারে বসা লোকটি।
রাষ্ট্র আমার মুখ দেখে ভয় পায়,
কারণ আমি বিক্রি হই না,
আমি সত্য বেচি না সভার করতালিতে।
আমার চোখের দিকে তাকাতে ভয় পায় তারা,
কারণ আমি দেখি—
কেড়ে নেওয়া স্বপ্ন, চাপা দেওয়া কণ্ঠ,
আড়ালে পুঁতে রাখা প্রতিবাদ।
আমার পায়ের শব্দে কেঁপে ওঠে তারা,
যেন আমি এক নীরব মিছিল—
যা কোনো দিন পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙবে না,
তবু পৌঁছে যাবে হৃদয়ের ভেতর।
আমি হই সেই ভবিষ্যৎ,
যা তারা ঠেকাতে চায়
সংবিধানের ব্যাখ্যায়,
আইনের চুপ করানোয়,
মিথ্যা উন্নয়নের ঢাকঢোল পিটিয়ে।
তারা জানে, আমি একা নই—
আমার মতো আরও অনেক ঘুম ভাঙছে,
আর প্রতিটি ঘুমভাঙা মন
একটি করে নতুন রাষ্ট্রের জন্মদাতা।
পর্ব ৫: আমার কবিতায় রাষ্ট্র জন্ম নেয়
আমার কবিতায় রাষ্ট্র জন্ম নেয়—
কোনো সীমানার রেখায় নয়,
একটি চেতনায়।
আমি যেখানে লিখি—
"মানুষ",
সেখানে সংবিধান গড়ে উঠে,
আমি যখন বলি—
"বিবেক",
সেখানে নীতির ভাষা জন্ম নেয়।
আমার কবিতা আর শুধু শিল্প নয়,
এ এক মানচিত্র—
যেখানে পাড়ায় পাড়ায় বয়ে চলে
উপেক্ষিত মানুষের আকাঙ্ক্ষা।
আমি রাষ্ট্র আঁকি এমন কাগজে,
যেখানে প্রতিটি শব্দ ন্যায়বিচার,
প্রতিটি ছন্দ প্রতিবাদ নয়—
প্রতিশ্রুতি।
আমি গড়ি এমন সংসদ,
যেখানে শব্দের যুদ্ধ হয় মানুষের পক্ষে,
যেখানে ক্ষমতার আসন পায়
যে নতমুখ নয়, উন্মুক্ত হৃদয় রাখে।
আমার রাষ্ট্রে স্কুল মানে প্রশ্ন শেখানো,
আদালত মানে নির্ভীক বিচার,
আর মন্ত্রণালয় মানে জনতার সেবক হওয়া।
আমি কবি—
তাই আমি স্বপ্ন দেখি না শুধু,
আমি গড়ি, আমি নির্মাণ করি,
যেখানে কবিতাই রাষ্ট্রের প্রথম খসড়া।
তোমরা যখন বলো,
"কবিতা কি রাষ্ট্র গড়তে পারে?"
আমি বলি—
"তোমাদের রাষ্ট্র তো কবিতা ছাড়া চলতেই পারেনি,
শুধু ভুল কবিতায় শাসন চলেছে বহুদিন।"
আজ আমি সেই কবিতা লিখি—
যার প্রতিটি অক্ষর একদিন
জন্ম দেবে নতুন একটি সকালকে।
সমাপ্তি পর্ব: আমিই রাষ্ট্র, আমিই বিপ্লব
তারা বহুদিন ধরেই চেয়েছে—
আমি থাকি নিরব,
আমি শুধু ভোট দিই,
আমি যেন প্রশ্ন না করি, ভাবি না, লিখি না।
কিন্তু আমি তো জন্ম নিয়েছি
একটি জিজ্ঞাসার আগুন নিয়ে,
যা দগ্ধ করে ফেলে সবকিছু—
যা মিথ্যা, যা অন্যায়, যা অমানবিক।
আজ আমি আর আলাদা কোনো অস্তিত্ব নই,
আমি নিজেই রাষ্ট্র—
যার গায়ে নেই কোনো শাসকের চিহ্ন,
যার শিরায় বয় মানুবিকতা,
যার হৃদয়ে লেখা আছে একটি কবিতার সংবিধান।
আমার প্রতিটি উচ্চারণে বাজে ন্যায়ের ঘন্টা,
আমার পায়ে পায়ে গড়ে উঠে জনগণের পথ,
আমার দাঁড়িয়ে থাকা মানে—
একটি ভাঙা ব্যবস্থার কাঁপতে থাকা ভিত।
আমি ভাঙি না রক্তে, ভাঙি চিন্তায়,
আমি লুট করি না, আমি ফিরিয়ে দিই অধিকার,
আমি আগুন ছুঁড়ে দিই না,
আমি জ্বেলে দিই আশার প্রদীপ।
তারা যে আমাকে ভয় পায়,
সে তো জানেই না—
আমি কেবল একজন নই,
আমি শত, আমি হাজার, আমি লক্ষ চিন্তাশীল হৃদয়ের সম্মিলন।
তাই আজ বলি—
আমিই রাষ্ট্র,
আমিই বিপ্লব,
আমার কবিতায় একদিন জন্ম নেবে
একটি সত্যিকার মানবিক সমাজ।