আমি ভাবতাম—
আমার যন্ত্রণা কেবল আমার,
আমার বোধ কেবল আমার ভেতরে সীমাবদ্ধ।
কিন্তু আজ বুঝি—
প্রত্যেক নিঃশ্বাসে আমি ছুঁয়ে যাই অন্য কোনো হৃদয়,
আমার একাকিত্বও এক ধরনের সমষ্টিগত কান্না।

আমি একা নই—
আমার মধ্যে বহমান এক ইতিহাস,
সহস্র মানুষের স্বপ্ন, ক্ষরণ, বিদ্রোহ আর প্রেম
আমার রক্তের ভিতর দিয়ে হাঁটে,
আমার কণ্ঠে তারা খুঁজে ফেরে
এক ভাষাহীন মুক্তির স্বর।

আমি বিশ্বমানব—
কারণ আমি শুধু আমার ক্ষুদ্র চেতনা নই,
আমি সেই আগুন,
যা যুগের পর যুগ ধরে মানুষের চোখে জ্বলে উঠেছে
অন্ধকারের বিরুদ্ধে।

আমার চিন্তা আজ আর দেয়াল ভেদে আটকে থাকে না,
এটি ভেসে যায় দূর সভ্যতার দিকে—
যেখানে একজন কৃষক, একজন কবি,
একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী বা এক আফ্রিকান কিশোর
আমার মতোই খোঁজে এক শব্দ—
"মানবতা"।

আমি একা নই—
আমার প্রতিটি নীরবতা জুড়ে
অসংখ্য নির্যাতিত কণ্ঠস্বর—
যারা কাঁদতে জানে না,
তবুও কাঁদায় আমার বিবেক।

আমি জানি,
এই অস্তিত্ব শুধু আমার নয়,
আমি নিজেকে যখন ভালোবাসি,
একজন অপরিচিতের মুখে আলো পড়ে,
আমি যখন প্রশ্ন করি—
সমস্ত সভ্যতা অনুরণিত হয় আমার সঙ্গেও।

তারা বলেছিল,
মানুষ একা জন্মায়, একা মরে।
আমি বলি—
মানুষ একা বাঁচে না,
সে বাঁচে সম্পর্কের আলিঙ্গনে,
এক অদৃশ্য নৈকট্যে,
যা সময়, স্থান, জাতি, ধর্ম—সব পেরিয়ে যায়।

আমি একা নই, আমি এক বিশ্বমানব—
যার বুকের ভিতর পৃথিবীর মানচিত্র,
যার আত্মার ভিতর একদিন মুক্তি পেতে পারে
সমস্ত সীমান্ত, সমস্ত ঘৃণা।