আমার বিচারধারা কখনো ঘুমায় না।
রাত যতই নিস্তব্ধ হোক,
সে জেগে থাকে চেতনার প্রহরী হয়ে।
জিজ্ঞাসা করে—
আমি কেন এসেছি এই পৃথিবীতে?
যে আমি ভালোবাসা খুঁজেছি,
কিন্তু পেয়েছি এক শূন্য স্পর্শ,
সে কি কেবল অনুভূতির এক নিঃসঙ্গ খেলা?
আমার বিচারধারা যেন এক ধারালো ছুরি,
যা কেটে দেয় অন্ধ বিশ্বাসের শিকল।
তবুও আমি বাস করি এমন এক সমাজে
যেখানে প্রশ্ন তোলা মানে অপরাধ,
ভিন্নমত মানেই যেন বিদ্রোহ ঘোষণা।
তখনই প্রশ্ন করি নিজেকে—
আমি কি কেবল উত্তরাধিকার?
একটি পূর্বনির্ধারিত রূপরেখা?
যেখানে আমার জন্মের আগেই
লেখা হয়ে গেছে ধর্ম, নীতি আর ভবিষ্যতের পথ?
আমি চেয়েছি এক মুক্ত অনুভব,
যেখানে ভালোবাসা আসে দাবি ছাড়াই,
যেখানে সম্পর্ক মানে নয় দাসত্ব,
বরং এক সম্মানজনক মেলবন্ধন—
দুইটি চিন্তার সম্মত আত্মসমর্পণ।
আমার বিচারধারা একদিন বলেছিল—
"তুমি যে ভালোবাসা খুঁজছিলে,
তা আসলে তোমার নিজের ভেতরেই ছিল।
একটি ভুলে যাওয়া সত্য—
যার নাম আত্ম-প্রেম।"
তাই আমি ফিরে এসেছি নিজের মাঝে।
প্রশ্ন করি সমাজ, ধর্ম, ভালোবাসাকে,
গড়ে তুলি এক নতুন সভ্যতা—
যেখানে চিন্তা মানে নয় অপরাধ,
বিচার মানে নয় পালিয়ে যাওয়া,
ভালোবাসা মানে নয় আত্মবিসর্জন,
বরং একসাথে হাঁটার, বুঝে নেওয়ার,
সমমর্যাদায় গড়া দুটি আত্মার গল্প।
আমি একদিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলাম সমাজের দিকে—
আমার নামটা কে রেখেছিল?
এই পরিচয়ের মুখোশ,
কে বানিয়েছিল আমার হয়ে?
যে বাবা বলেছিলেন, “তুমি হবে সবার মতো,”
তিনি কি বুঝেছিলেন, আমার ভেতরে
জ্বলছিল এক আলাদা আগুন?
আমার বিচারধারা শুধু হাসে—
যখন আমি নিয়ম মেনে মাথা নিচু করি,
সে ফিসফিস করে বলে,
“তুমি তো জন্মেছো ভাঙার জন্য,
তবে গাঁথা এই দেয়ালগুলো তোমায় এত ভয় দেখায় কেন?”
আমি দাঁড়িয়ে থাকি জনতার মাঝে।
সকলেই হাসছে, হাততালি দিচ্ছে—
আমি বুঝে যাই, তারা সমাজে গলে গেছে।
আর আমি?
আমি প্রতিটি হাসির ভেতর খুঁজি একেকটা প্রশ্ন,
এই উল্লাসটা কি সত্যি?
এই নিয়মগুলো কি আদৌ দরকারি?
আমার বিচারধারা আবারও ডাকে—
“এসো, সমাজের সীমানা পেরিয়ে চলো,
চলো খুঁজে পাই সেই 'তুমি'কে,
যে কিনা সমাজের তৈরি সংজ্ঞায় ধরা পড়ে না।”
সেই আহ্বানে আমি দেখি—
ভবিষ্যতের রাস্তা অন্ধকার হলেও,
একটি আলো জ্বলে থাকে—
নিজেকে জানার এক প্রবল, অদম্য ইচ্ছায়।
আমার বিচারধারা এখন আমায় ভেঙে আবার গড়ছে।
আমি আর আগের সেই 'আমি' নই—
যে সমাজকে ঈশ্বর মনে করত।
এখন আমি নিজেই আমার নির্মাতা।
আমার ভাবনা এখন আর ধর্ম নয়,
ভালো লাগা নয়, এমনকি প্রেমও নয়—
এটা এক দর্শন,
যা প্রতিটি পদক্ষেপে বলে,
“তুমি খোঁজো নিজের সত্য,
বাকি সব গৌণ।”