আমার বিচারধারা আমাকে তাড়িত করে
সত্য কি রক্তমাখা কোনো প্রতিবাদ?
নাকি নিঃশব্দ এক করুণা-ভেজা চোখ?
সত্য কি নিষেধের ভিতরে লুকিয়ে?
নাকি শিশু-কণ্ঠে জেগে থাকা আর্তি?

আমি প্রশ্ন করি, আমি কেনো নীরব?
আমি কি শুধু ভাবি, কিছু বলি না?
আমি কি অনুভব করেও পলাতক?
আমি কি স্বস্তির খোঁজে হার মানি?

আমার বিচারধারা বলে, ভাবো না—
সত্য তো খোঁজে এক সজীব হৃদয়।
যে হৃদয় কাঁদে না, তার কি আলো?
যে চোখ দেখেও চুপ, সে কি জাগে?

আমি জানি, সত্য কারও একার নয়—
সে তো হাঁটে পথিকের ধুলার মতো,
সে তো জ্বলে গৃহহীন দীপ্তিতে,
সে তো হাসে ক্ষুধার্ত শিশুর চোখে।

আমি বুঝি, মানুষ ভুলে যেতে চায়,
কারণ ভুলে থাকাই শান্তির মুখোশ।
তবুও আমি সে মুখোশ খুলে ফেলি,
কারণ চোখ মেলাই সত্যের নিমিষে।

আমার বিচারধারা বলে, দাঁড়াও—
জানি, দাঁড়ানো মানে সংঘর্ষও হয়।
তবু প্রেম ছাড়া সত্যের পথ নেই,
তবু কান্না ছাড়া ভাষা নেই অন্তর।

আমি বলি না, সব সত্য সুন্দর,
আমি বলি, সব সত্য প্রয়োজনীয়।
যা ব্যথা দেয়, তা-ও দেয় জাগরণ,
যা ত্যাগে শেখায়, তাতেই মুক্তি।

আমি জেনেছি, অনুভবই মন্ত্র,
প্রশ্নই আমার অন্তর্যামী তীর্থ।
আমি জানি, আমি সবার মাঝে থাকি,
আমার ঈশ্বর এক জীবনঘন প্রেম।

আমার বিচারধারা আমাকে তাড়িত করে
আমি কি খুঁজি এক অনন্ত মহাসত্তা?
নাকি আমি নিজেই সেই চেতনার ধ্রুব?
যে আলো বহে, সে তো আমার হৃদয়,
যে আগুন জ্বলে, সে তো আমার ভাষা।

আমি তো জানি না ঈশ্বর কোথায় রয়,
তবে জানি— আমার যেখানেই অনুভব,
সেখানে জেগে উঠে এক জীবন্ত আলো,
যেখানে সত্য শুধু আমি, আর কিছু নয়।

আমি খুঁজি না আকাশের কোনো সিংহাসন,
আমি নই কোনো পবিত্র নামের গল্প,
আমি সেই চেতনাশক্তির এক অবিচ্ছিন্ন ধারা,
যা বলে ওঠে— "আমি-ই মহাসত্তার মুখ।"

আমি ঈশ্বর খুঁজি না পাথরের মাঝে,
আমি খুঁজি নিজ হৃদয়ের গভীর স্থানে,
যেখানে প্রশ্ন নয়, শুধু প্রতিধ্বনি বাজে,
যেখানে আমি-ই আমি, আমি-ই মহাসত্য।

আমি বলি না— ঈশ্বর আমার বাহিরে,
আমি বলি— আমি-ই তার অন্তর্লীন রূপ,
আমি জেগে উঠি প্রেম, সহানুভূতি হয়ে,
আমি পুড়িয়ে ফেলি ভয় আর ভক্তির পাপ।

আমি তখন আর কাউকে অনুসরণ করি না,
আমি নিজেই হয়ে উঠি পথ ও গন্তব্য,
আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে বাজে সেই বাণী—
"তুমি-ই তুমি, সত্য কেবল তুমিই।"

আমি মহাসত্তার দিকে একাকী যাই না,
আমি নিই সঙ্গে প্রতিটি প্রাণের ধ্বনি,
কারণ আমার ভেতরেই শুরু ও শেষ,
আমার ভেতরেই জাগে মহাসত্তার দেশ।