ঘুমে ভরা কোন এক স্বপ্নের রাতে দেখিয়াছি,
দেখিয়াছি,আমার অবশ দেহ নুইয়ে বসে আছি খোলা আকাশের নিচে ।
হাল ভাঙ্গা জাহাজের মত মন নিয়ে,
কোন এক পড়ন্ত বিকালে সমুদ্রের ধারে ।
অদুরে আকাশে,গভীর সমুদ্রে যাযাবর মন আমার বেড়াই ঘুরে ।
একা একা মন আমার ভাবিয়া মরে,
সঙ্গীহীন জীবনে সঙ্গী সে করিবে কারে ।


হঠাৎ পথে বাঁধা জমে তবুও সে আসে না ফিরে,
দূরে-দূরে-আরো দূরে- আরো দূরে,
অসীম সমুদ্রের পরে, আকাশ সীমানা জুড়ে,
মন আমার বেড়াই ঘুরে ।


হঠাৎ দূর সমুদ্র থেকে কিসের যেন সু-মধুর সুর বিঁধল হৃদয়ে ।
কে যেন ডাকিতেছে তার আকুল,অলস, উদাস হাসির সুরে ।
কোন দিগন্তে, নির্জন কোন স্বপ্ন মায়াবী-পুরে ।


কান পেতে শুনতে চেষ্টা করি সুরটা কিসের বা কার;
এ তো কোন এক মেয়ের অপরূপ হাসির ঝঙ্কার ।
প্রশ্ন জাগল মনে কেনইবা হাসিতেছে এমন মাতাল হাসি,
ভাবতেই বুকের ভিতর উঠিল কাঁপি ।
তারপর এক অন্যরকম ভাবনায় ভাবতে লাগলাম আনমনে ।
মন আমার ফিরে এলো সূদুর রক্তিম সূর্যের আলো থেকে ,
মাথার পরের ভাবনা মেঘের পাথারপুরী ছেড়ে ।
নেমে এসে জানতে চাইলো সমুদ্রের ভেজা জলে দাড়ায়ে
মেয়েটা কে?
কি তার চাওয়া?
কি তার নিবেদন?
কেনইবা, হাসিতেছে সমুদ্রের ভেজা পথ ধরি?


হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন ডাকিয়া কহিল মোরে,
নিবে তুমি, আমি কিছু দিলে?
নিরবে চাহিলাম আমি আনন্দের আরক্তিম আঁখি তুলে ।
চেয়ে দেখিলাম জড়ানো আছে ভেজালাল শাড়ি,
অর্ধ ফোটা ফুলের ন্যায় তার শরীরে ।
দেখিলাম মায়াবী হাসিতে ভরা,
তার বিন্দু বিন্দু জলে সিক্ত সাদা-সিধা মুখখানি ।
চোখে চোখ পড়তেই মনে হল ধ্রুবতারার মত তার আঁখি ।
শিশির ভেজা বনফুলের মত তার ঠোঁটগুলো কাঁপছিল থর থর,
দেখতে অবিকল জলে সিক্ত একখানি লাল পদ্মের মত।


চেয়ে থাকি চোখ তুলে যেন মোর পালাতকা প্রিয়া,
ভাবতেই আমার শরীর উঠিল শিহরিয়া ।
মনে হয় তারে যেন দেখিয়াছি জন্মে জন্মে ফিরে ফিরে,
হাটে মাঠে বাঁশবনে জোনাকির ভীড়ে ।
বিলে-ঝিলে যেখানে ভরে গেছে কলমি ফুলে,
দেখিয়াছি কোন পূর্ণিমার আকাশে তারার বনে,
আমি দেখিয়াছি তারে ঘুমপথে স্বপ্নে ।
দেখিয়াছি তারে মোর জানালার ধারে রাতের দুপুরে,
যখন বাদুরেরা উড়ে যায় আহারের সন্ধানে ।


প্রশ্ন জাগে মনে এ কোন মেয়ে !
এই পড়ন্ত বিকালে দাড়াল আমার সম্মুখে ।
তখন প্রায় নিবু নিবু দিনমণি, মেঘগুলো খেলিতেছে লুকোচুরি ।


ফের ডাকিল মোরে স্বপ্নের মেয়ে,
বলিল মোরে, এই গোলাপ পুষ্প কি তুমি নিবে?
ভাবিয়া কহিলাম আমি, জানো কি তুমি পুষ্প প্রদানের অর্থ ?
পুষ্প শুধু প্রেমের প্রতিকই নয়,প্রতিক বটে রক্তজ কামনারও,
তবুও আমি নিতে পারি মানতে হবে শর্ত ।
বলিতে হবে তোমার বাসা কোথায়,কোথায় তুমি থাকো?
বলতেই চোখ তার ভরে গেল নীল অশ্রুজলে,
ঠিক পাহাড়ের ঢালে ঝরনা যেমন ঝরে ।


ঘুরেছে সে মোর লাগি, উড়েছে অসিম আকাশে,
অবুঝ শিশুর মত কেঁদে কেঁদে সে চেয়েছে মোরে,
আমিও চেয়েছি তারে, ঘুরেছি বাউল বেশে,
অবশেষে বেঁধেছি সুখের ঘর,
দৈবাৎ ঘুম ভাংতেই বুঝতে পারলাম, ডুবে ছিলাম স্বপ্নের ভিতর ।


আমি একা একা স্বপ্নে চিনিয়াছি তারে,
আমারে চেনেনি সে,দেখেনি স্বপ্নের ঘোরে ।
কখনও দাড়ায়নি সে প্রেমের দাবি নিয়ে মোর পাশে ।
আসেনি সে ভরাহাটে,খেয়াঘাটে,
কেহ তারে দেখেনি কোনদিন,মাঝি তারে ডাকেনি সাঁঝে ।
বৈশাখের আকাশে কালো মেঘ ফুড়ে,
হয়তো শুনেছো তার সুর,
ঝরেপড়া শুকনা পাতা উড়ে যাওয়া বাতাসে ।
সে আছে ঘাসের বুকে জমে থাকা শিশিরের জলে,
খুঁজে তারে পাওয়া যাবে বিলে-ঝিলে শাপলার দলে ।
সে যেন, কোন রঙিন প্রজাপতির পাখা,
চেনা চেনা মুখ সবই, সে যে শুধুই সূদুর অজানা ।