তিতলি , তিতলি, তিতলি ...
সোনা ঝড়া হাসি তার , গাত্রবর্ণ রোদ্দুর ;
চোখ বন্ধ করলেও ভেসে ওঠে ,আলোর আগমনী আভাস  ।
শরৎ ও হেমন্তের কাশ দোলা ঝরার সমন্বয় ছিল তিতলি ।
ওর কথা ,......খুব যেন মনে পড়ে আমার ।
আজ ক্লান্ত দুপুর... বসে আছি ডাঙতলার বারান্দায়
শূণ্যে মন আমার উঠা নাবা করে মাটির আঙিনায় ।
দূর কোন উত্তর সাগরের ঢেউ এসে_
বারবার মন ভিজিয়ে গেছে ।
আদ্রতায় ভিজে গেছে মনের শুষ্ক - ঘাস ,
পুঁতে গেছে অনুকম্পার বীজ, শেখর_
গজিয়ে প্রসার হয়েছে ডাল, পালার ভেজা মনে ও প্রাণে ।
গা ঘেঁষে, বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দরা সাথে খেলতে চায় ।
দুখের সাথী হতে চায়, তাই মন কেও উড়িয়ে নিয়ে যেতে চায় ।
যেখানে অদৃশ্য বাতাস তিতলির সাথে খেলা করে সন্ধ্যায় ।
অকম্মাৎ সংবিৎ ফিরে পেলাম !
দেখি ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে.... মাটি, ধুলি- মাখা পাতায়,
ফুল-কলি গুল্ম ডাল পাতা স্ফটিক এর মতো স্বচ্ছ ।
মনে হলো ঝড় এসে ওর জীবনের ভুল করা ধুলি_
ধুইয়ে দিয়ে গেল..হায় শেষের সেদিন ;
সূর্য ডোবার পূর্বে সে যে ছিল অতি নিঃসহায়  ।
অস্ত চাঁদের কেহ রাখেনি খোঁজ !
বরষার বৃষ্টি বিন্দু ছিল ওর মেঘ - চোখ হতে_
ঝড়ে পড়া পুঞ্জীভূত  অশ্রু , বুকে বাঁধা_
কালো মেঘ আপূর্তি স্বপ্ন  ।
মাঝে মধ্যে পুবের রামধনু মুখ দেখিয়ে যায় এক ঝলক।
ওর নৈসর্গিক জীবনের প্রতীকী চিহ্ন ।
মনে হয়, ও আকাশ থেকে সীমাহীন প্রান্তর ছুঁতে চায়;
জড়িয়ে ধরে চুমু খায় ..বারবার ।
ওর ভালো লাগা আলো বাতাস জল,
... আর এই ধরণীর মাটিকে ।
এভাবেই আমার মনে উঁকি দিয়ে গেছে, সে কতবার ।
কোষ- কোষিকায় রঙ মেখেছিল আমার ।
সে যে ছিল এক দূরন্ত পনা কাশ্মীরের চাঁদ, __
গুলমোহরের কলি ,ডাল ঝিলের স্বচ্ছ আয়নার জল।
যে জলে সবার রাঙা হাসি প্রতিফলিত হয় ।
সেই  চাঁদ- কলি ছিল,  সবারই অন্তরঙ্গ  ।
মরু নয়, ফুল , সুগন্ধি, ঝর্ণা সব ভালোবাসার অঙ্গ -সঙ্গ ।
ওর ভালোবাসা কত উচ্ছল যৌবনের মনে ঘর বেঁধেছিল।
..... ভালোবাসার পাবার শেষ ফলক ছিল তিতলি ।
দৌড়ে ছুঁয়ে দিতে পারলেই বিজয়ী ঘোষিত হবে - এমন  ।
ঝর্ণার কল কল সুরে বইত, করত কলতান  ;
সুরে- বেসুরে ভরে দিত সবারই যে মন প্রাণ ।
ছোট্ট পাখির সুরে কথা বলত ,
ফরিং এর ল্যাজে সুতো বেধে ঘুরির মত উড়াত ।
মনে পড়ে সপ্তরঙ্গী রামধনুর একেকটি রঙ ;
রঙ গুলো কিভাবে জীবনে লেপ্টে_
ছিল ওর মনে প্রাণে ও চোখে ।
ষোড়শী বালিকা বিহঙ্গের মত রঙীন অন্ত প্রাণ ।
রঙ বেরঙের প্রজাপতির ডানায় ভর করে_
ভেসে বেড়াত  লাল নীল সবুজ গোলাপী মাখা_
কিছু স্বপ্ন ,কিছু কথা, কিছু মনোহরা দৃশ্যপট ।
যে আকাশ আদি যুগ হতে সবাইকে  হাতছানি দিয়ে
ডাকে ,"কাছে আয় কাছে আয় "
যে আকাশ উদারচরিতানাম্ হৃদয়- সখ্যতার শিক্ষা দিয়ে যায় ;
যে আকাশ অমলিন হৃদয়ের প্রতি পূরক;
সেই আকাশ নিয়ে এল তিতলির জীবনে_
অমানিশা র অন্ধকার !
সেই সৌম্য কান্তিতে ভরা যুবক আকাশ ছিল_
মেঘের আড়ালে থাকা ও ঢাকা
এক অভিশাপ, সন্রাসী সেলিম ।
এই সৃষ্টির চড়াচড়ে বিধির বিধান-নিদান সম্পূর্ণ পৃথক ।
এ এক অধ্যুষিত এলাকা,অধ্যায় ,
কালো মেঘ নিয়ে এসেছিল সন্ত্রাসী ঘনঘোর সন্ধ্যায় ।
অজানা অচেনার ডাক স্বভাবতই কৌতূহল জাগায় !
তাই অবেলা র ডাকে সেলিমের ইশারায়_
সাড়া দিয়েছিল অভাগা কলি ,আমাদের তিতলি ।
পাড়ি দিয়েছিল সুদূরে সাত সমুদ্রের ওপারে ।
যেখানে বিষাক্ত বায়ু সন্রাসীর জীবন যাপন ;
পদে পদে মৃত্যু পথ যাত্রী পদে পদে মৃত্যু রণ ।
তিতলির মরণ সেদিনই হয়েছিল ,
যে দিন করেছিল সে ভালোবাসার নিদারুণ ভুল ।
যে ভুলের না আছে বেদ বেদান্ত;
যে ভুল তাড়া করে মৃত্যু- পর্যন্ত ।
এখনো যখন ঝড়ো আকাশ হয় , বাদল ফাটে_
তিতলির কথা খুব মনে পড়ে ।
তাই বলি আরো একবার_
"লঙ্ঘিয়া লক্ষণ গণ্ডি সীতা করি পার,
জীবন দুঃখের হলো বিদিত সংসার ।"


বাবুল আচার্যী    4/02/2018